ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে যাচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানানো হতে পারে। খবরটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের সাবেক বাসিন্দা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যেকার এই ফোনালাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি এই ফোনালাপের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, চূড়ান্ত চুক্তির অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তবে এখনো অনেক কিছু আলোচনার বাকি রয়েছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, দুই নেতা ইউক্রেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “আলোচনাটি প্রয়োজনীয় সময় ধরে চলবে।”
এই ফোনালাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, গত সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। তবে পুতিন সরাসরি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তার শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির সময় অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানাতে পারেন পুতিন। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া সামরিক সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে ইউক্রেনকে দ্রুত সামরিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাই এই শর্তে তাদের রাজি হওয়া কঠিন হতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দীর্ঘমেয়াদী শান্তি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ইউক্রেনের সামরিক শক্তি কমানো, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধ করা এবং কিয়েভকে ন্যাটো জোটের বাইরে রাখার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, রুশ ও মার্কিন আলোচকদের মধ্যে কিছু সম্পদ ভাগাভাগি নিয়েও কথা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে কিয়েভ উদ্বিগ্ন। কারণ, ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে চাপ দিতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা ভূমি নিয়ে কথা বলব, অনেক ভূমি। যুদ্ধের আগের পরিস্থিতির থেকে এটা অনেক আলাদা। আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়েও কথা বলব।” এখানে সম্ভবত তিনি ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র জাপোরিঝিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্পের এই ধরনের বক্তব্য ১৯৪৫ সালের ইয়াল্টা সম্মেলনের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে জোসেফ স্ট্যালিন, উইনস্টন চার্চিল এবং ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ইউরোপকে পশ্চিমা ও সোভিয়েত প্রভাবের ভিত্তিতে ভাগ করেছিলেন। তবে, ক্রেমলিন মুখপাত্র পেসকভ দ্রুত এই ধরনের তুলনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সেমাফোর জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস সম্ভবত ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ক্রিমিয়াকে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে বিষয়টি সমর্থন করার জন্য চাপ দিতে পারে।
অন্যদিকে, ভারতের নতুন দিল্লিতে এক নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা শান্তি চুক্তির জন্য কিয়েভের মূল শর্তগুলো তুলে ধরেন। তার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাশিয়ার অঞ্চল দখলের স্বীকৃতি না দেওয়া (ক্রিমিয়াসহ), ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করা এবং ইউক্রেনের ইইউ ও ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে রাশিয়ার ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা না থাকা।
ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চল থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে পিছু হটছে। ট্রাম্প সোমবার দাবি করেছেন, তিনি ওই অঞ্চলের হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে রক্ষা করেছেন। তবে কিয়েভ এবং সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের অবরুদ্ধ করার খবর সঠিক নয়। বরং, গত কয়েক সপ্তাহে তারা সুসংগঠিতভাবে পিছু হটেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান