ফেডারেল রিজার্ভ: চুপিসারে ট্রাম্পের চাঞ্চল্যকর পরিবর্তন!

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে (ফেড)-এর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব: বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এর তাৎপর্য।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এর কার্যকারিতায় পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরাসরি অপসারণ করা হয়নি, তবুও বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাংক খাতের নিয়মকানুন শিথিল করা, ফেডারেলের কর্মী সংখ্যা কমানো এবং ব্যয়ের লাগাম টানার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, দেশের আর্থিক নীতি নির্ধারণ এবং ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত সুদের হার নির্ধারণ, ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম তদারকি ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মতো কাজ করে থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ফেডারেল রিজার্ভের কার্যকারিতা এবং দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফেডারেল রিজার্ভে পরিবর্তনের মূল কারণ হলো ব্যাংক খাতের নিয়মকানুন সহজ করা। এই লক্ষ্যে, মিশেল বোম্যানকে ভাইস চেয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

তার নেতৃত্বে, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর ব্যাংকগুলোর ওপর আরোপিত বিভিন্ন কঠোর নিয়মকানুন পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের এবং সাধারণ মানুষের জন্য ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুবিধা পাবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যাংক ব্যবস্থার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছরে ফেডারেলের প্রায় ১০ শতাংশ কর্মী কমানো হবে।

এর কারণ হিসেবে সরকারি পর্যায়ে কর্মীর দক্ষতা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও, ফেডারেল রিজার্ভের প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সংস্কার প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

তারা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি অতিরিক্ত ব্যয় করছে।

তবে ফেডারেল রিজার্ভের অভ্যন্তরে এই ধরনের পরিবর্তন আনা সহজ হবে না। ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক উপদেষ্টা বিল ইংলিশের মতে, চেয়ারম্যান চাইলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে পারেন, কিন্তু কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো বৃহত্তর সিদ্ধান্ত বোর্ডের ভোটের মাধ্যমে নিতে হবে।

ফেডারেল রিজার্ভে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এর অনেক তাৎপর্য রয়েছে।

কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফেডারেল রিজার্ভের নীতি পরিবর্তনের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং মুদ্রার বিনিময় হারে পরিবর্তন আসতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এছাড়াও, ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *