ট্রাম্পের ধরপাকড়ে আতঙ্কে টেক্সাসের বাসিন্দারা, চিকিৎসা নিতেও ঘরবন্দী!

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি অঞ্চলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ধরপাকড়ের কারণে সেখানকার বাসিন্দারা, এমনকি অসুস্থ হলেও, ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের।

টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ড উপত্যকার সীমান্তবর্তী এলাকা, যেখানে বহু বছর ধরে বসবাস করা অভিবাসীরা এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও দূরে থাকছেন, কারণ তারা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে ভীত। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির কারণে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হুয়ানিতা নামের ৪১ বছর বয়সী এক নারী, যিনি দীর্ঘদিন আগে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছেন, তিনি এখন প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটান। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হুয়ানিতা ওষুধ আনতে ফার্মেসিতে যেতেও ভয় পান। তার আশঙ্কা, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে আটক করতে পারে। কারণ, তার ১৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে, যে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত।

শুধু হুয়ানিতা একা নন, এমন আরও অনেক অভিবাসী আছেন যারা আতঙ্কের কারণে চিকিৎসা নিতেও যেতে পারছেন না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দশকের পর দশক ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছেন। এখানকার ‘হলি ফ্যামিলি সার্ভিসেস’ নামের একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কর্মরত সান্দ্রা দে লা ক্রুজ-ইয়ারিসন জানান, মানুষজন এখন তাদের বাড়িঘর থেকে বের হতে চাইছে না। কারণ, তারা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে ভয় পাচ্ছেন।

এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এমনিতেই উদ্বেগের কারণ। এখানকার প্রায় অর্ধেক মানুষ অতিরিক্ত ওজনের শিকার। নারীদের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি, আর বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়ার সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও, এখানকার প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস রয়েছে। দারিদ্র্যের হারও জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।

ডাক্তার স্ট্যানলি ফিশ জানান, মানুষজন এখন ভয়ে ডাক্তার দেখানোর পরিবর্তে তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো গোপন করার চেষ্টা করছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য আরও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের কারণে অনেকে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন। এমনকি, অনেকে তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্য বীমা করাতেও দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য চলে যাবে।

আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগ সম্প্রতি দেশটির স্বাস্থ্য বিষয়ক ডেটাবেজে প্রবেশাধিকার লাভ করেছে। এর ফলে তারা অভিবাসীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জানতে পারবে, যার মধ্যে তাদের ঠিকানা ও পরিচয়ও অন্তর্ভুক্ত।

৮২ বছর বয়সী মারিয়া ইসাবেল দে পেরেজ নামের এক নারী জানান, তার ছেলে পেটে তীব্র ব্যথার কারণে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে তার অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যায়, যা প্রায় মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসীরা চিকিৎসা সেবা থেকে দূরে থাকতে শুরু করেন। বোস্টন, মিনিয়াপলিস এবং লিটল রকে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর অভিবাসী মায়েদের শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার হার কমে গিয়েছিল।

এই অঞ্চলের মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা-যাওয়া করে আসছে। তাদের অনেকে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে বা সস্তায় দাঁতের চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়মিত মেক্সিকো যেতেন। কিন্তু এখন তারা তাদের প্রতিবেশীদের ওপর ধরপাকড় চালানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।

হুয়ানিতার ১৫ বছর বয়সী ছেলে হোসে জানায়, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সবসময় প্রার্থনা করেন। তাদের একটাই চাওয়া, তারা যেন তাদের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *