আতঙ্কে বাজার, শুল্কের আগুনে বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব বাজার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ কিছু ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণা করতে পারেন, যা চীন, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উপর প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে এবং বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি মনে করেন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশ ‘ঠকিয়েছে।

তাই তিনি এই ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘মুক্তি দিবস’ ঘোষণা করতে চাইছেন। যদিও রিপাবলিকান দলের কয়েকজন সিনেটর ইতোমধ্যে এই নীতির বিরোধিতা করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার কথা ভাবছেন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইতিমধ্যে, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার আগেই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, ট্রাম্পের মতে, এই পদক্ষেপের কারণে মিত্র দেশগুলো চীনের দিকে ঝুঁকবে না।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার দেশ-ভিত্তিক শুল্ক ঘোষণা করা হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপরও আলাদা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্ব বাজারের সূচকগুলোতে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ার বাজার নিম্নমুখী হয়েছে, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাও ও এসএন্ডপি ৫০০ সূচকে সামান্য উন্নতি দেখা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে আনতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর বিশ্লেষকরা আগামী এক বছরের মধ্যে মন্দা আসার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করেছেন।

তারা আরও বলছেন, এর কারণ হলো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস এবং শুল্ক আরোপের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হওয়া। ইতিমধ্যে, চীন ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং ইইউও তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি উদ্বেগের কারণ, তবে এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব খুব বেশি হবে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এমন দেশগুলো—যেমন চীন, ইইউ, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও ভারত—সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশ তাদের বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লগার্ড বলেছেন, ইউরোপকে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাধীন হতে হবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, ইইউ ট্রাম্পের নীতির জবাব দেবে, তবে তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মতো প্রধান রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *