আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করা শরণার্থীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রে কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের কারণে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানুয়ারিতে ফেডারেল শরণার্থী কর্মসূচির তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে, তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন এবং মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন সাহায্যপুষ্ট একটি সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করতেন রাহমানি (ছদ্মনাম)। তালিবান ক্ষমতা দখলের পর জীবন বাঁচাতে তিনি পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
কিন্তু সেখানেও যেন তার মুক্তি নেই। মাসিক প্রায় ১,৮৫০ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ টাকার বেশি) বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ চালানো তার পক্ষে এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
রাহমানির মতো হাজারো শরণার্থীর জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
লরেন, মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী রাহমানি কাজ খুঁজে বের করার জন্য দিনরাত চেষ্টা করছেন। ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণী বিতানেও তিনি চাকরির জন্য ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে শরণার্থীদের জন্য সরকার তিন মাসের আবাসন, খাদ্য এবং চাকরি খুঁজে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। এছাড়াও, অন্যান্য ফেডারেল অনুদান তাদের প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত সহায়তা করত।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে রাহমানির পুনর্বাসন পরিষেবা দুই মাস পরেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, ছয় মাস পর্যন্ত ভাড়ার ওপর যে সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তিনি এখন মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ খাচ্ছেন। রাহমানি বলেন, “ওষুধ না খেলে, খারাপ চিন্তাগুলো মাথায় আসে।”
রাহমানি “লুথেরান সোশ্যাল সার্ভিসেস অফ দ্য ন্যাশনাল ক্যাপিটাল এরিয়া” (LSSNCA)-এর একজন ক্লায়েন্ট। এই সংস্থাটিও বর্তমানে আর্থিক সংকটে রয়েছে।
সরকারি সহায়তা বাবদ তাদের প্রায় ৩৭ লক্ষ ডলার (প্রায় ৪১ কোটি টাকার বেশি) পাওয়ার কথা, যা এখনো তারা পায়নি।
কর্মচারী ছাঁটাইয়ের কারণে LSSNCA-এর পরিষেবাগুলোও কমে গেছে। সংস্থাটি এরই মধ্যে ৭৫ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে এবং আরও সাতজনকে ছুটিতে পাঠিয়েছে।
কর্মী সংকটের কারণে শরণার্থীদের জন্য নিয়মিত পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। LSSNCA-এর দুই-তৃতীয়াংশ ক্লায়েন্টই আফগান নাগরিক, যারা তালিবান শাসনের পর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী অথবা রাহমানির মতো, মার্কিন-সমর্থিত বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করতেন।
আফগানিস্তানে মার্কিন সাহায্যপুষ্ট একটি মিডিয়া সংস্থায় কাজ করা মারজিলা বাদাকশ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। কিন্তু জানুয়ারিতে LSSNCA থেকে তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে, উদ্বাস্তু সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা “গ্লোবাল রিফিউজ”-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ ও’মারা ভিগনারাজা বলেন, “আমরা একটি দীর্ঘ-প্রতিষ্ঠিত দ্বিদলীয় কর্মসূচির কার্যত ধ্বংস হতে দেখছি, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল।”
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনের নাগরিক আনাস্তাসিয়া দে জয়েসাও বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যুদ্ধের কারণে তিনি ইউক্রেন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা মেরিল্যান্ডে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকছেন।
শরণার্থীদের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত ৩০ হাজার শরণার্থীর জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আফগানিস্তানের শরণার্থীরা তাদের অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, কিন্তু এখানেও তারা নতুন করে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছেন।
রাহমানি এখন প্রায়ই বলেন, “যদি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে আমি কোথায় থাকব? রাস্তায় আমার পরিবারের কী হবে?”
তথ্য সূত্র: