ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত: এআই চিপ রপ্তানির বিতর্কিত বিধিমালা পরিবর্তনের পথে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বাইডেন প্রশাসনের আমলে তৈরি হওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ রপ্তানির ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই পদক্ষেপের ফলে উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষ করে অত্যাধুনিক এআই চিপের বিশ্বব্যাপী বন্টন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এর পাশাপাশি, এই প্রযুক্তির সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলোর মুনাফা এবং এআই-এর বিশ্ব নেতৃত্বে আমেরিকার স্থান কেমন হবে, সে বিষয়েও প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসন এই বিধিনিষেধগুলো এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেখানে বিভিন্ন দেশকে এআই-সংক্রান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর (যেমন: যুক্তরাজ্য, স্পেন, জাপান, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড) জন্য বিধিনিষেধ তুলনামূলকভাবে কম ছিল, কিন্তু চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য ছিল কঠোর নিয়মকানুন।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ। তিনি মনে করেন, এই ধরনের বিধিনিষেধের কারণে দেশগুলো বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারে। বিশেষ করে, চীন এক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারে।
তিনি আরও জানান, খুব শীঘ্রই তিনি একটি নতুন বিল পেশ করতে যাচ্ছেন, যা ‘নিয়ন্ত্রক এআই স্যান্ডবক্স’ তৈরি করবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে এরই মধ্যে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মাইক্রোসফটের ভাইস চেয়ার ও প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ ফেব্রুয়ারিতে এক মন্তব্যে বলেছিলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে দ্বিতীয় সারির দেশগুলো অন্য কোথাও এআই অবকাঠামো এবং সেবার সন্ধান করতে পারে এবং তাদের সেই গন্তব্য কোথায় হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
এআই চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এনভিডিয়াও (Nvidia) এই বিধিনিষেধের বিরোধিতা করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এআই-এর ক্ষেত্রে কম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সের মতে, এআই খাতের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে, যখন এটি উন্নতির পথে রয়েছে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাকশন সামিট’-এ তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প প্রায়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআই শিল্প এবং প্রযুক্তি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছেন এবং টিএসএমসি ও অ্যাপলের মতো কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়টিকেও উৎসাহ জুগিয়েছেন।
অন্যদিকে, চীনের একটি প্রযুক্তি স্টার্টআপ, ডিপসিক (DeepSeek), বাজারে আসে তাদের উন্নত এআই মডেল নিয়ে। তাদের দাবি, ওপেনএআইয়ের ওয়ান (o1) মডেলের কাছাকাছি পারফর্ম করতে পারলেও, এটির দাম অনেক কম।
এটি একদিকে যেমন প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এআই প্রতিযোগিতাকেও আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং এতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন