ট্রাম্পের প্রতিশোধ: ক্ষমতা গ্রহণের পর সমালোচকদের ওপর আঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ফিরে আসার পর তাঁর সমালোচক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তিনি নির্বাহী আদেশ, ফেডারেল তদন্ত এবং অন্যান্য উপায়ের মাধ্যমে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছেন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প নিজেকে ‘আপনাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
ক্ষমতা ফিরে আসার পর তিনি যেন সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে, নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলা ব্যক্তিদের ওপর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দুর্বল করতে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর প্রতিশোধ নিতে এসব করছেন।
উদাহরণস্বরূপ, তাঁর প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের বাসভবনে এফবিআই তল্লাশি চালিয়েছিল।
জন বোল্টন ট্রাম্পের নীতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
এছাড়া, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিসের নিরাপত্তা রক্ষীদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসন শতাধিক ব্যক্তির নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেছে।
এদের মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
এছাড়াও, তিনি বহু সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন এবং তাঁর সমালোচকদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে কিছু আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও, ট্রাম্প প্রশাসন সেগুলোকে তেমন একটা পাত্তা দেয়নি।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
এর মধ্যে রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে গোপন নথি রাখার অভিযোগ, ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের তদন্ত।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, যিনি ট্রাম্প ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনিও এখন এফবিআই-এর তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
ট্রাম্পের সমালোচকদের মতে, এসব পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তাঁরা মনে করেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করতে চাইছেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকারের ‘অখণ্ডতা’ ফিরিয়ে আনছেন।
তাঁদের দাবি, যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের জবাবদিহি করা উচিত।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ন্যাশনাল আর্কাইভস-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA)-এর কিছু কর্মীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
একইসাথে, ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের সমর্থন করে তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তকারীদেরও নিশানা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলবে।
অনেকেই মনে করেন, এর মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র দুর্বল হতে পারে এবং রাজনৈতিক বিভেদ আরও বাড়তে পারে।
তবে ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, তাঁরা দেশের স্বার্থে কাজ করছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন