যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অংশ হিসেবে এবার আইনজীবি সংস্থাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। ক্ষমতা ছাড়ার পরও তিনি বিভিন্ন আইনী লড়াইয়ে তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাওয়া আইনজীবিদের শায়েস্তা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
সম্প্রতি এক নির্দেশনায় তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেছেন, যা সংশ্লিষ্ট আইনজীবি সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে কঠিন করে তুলবে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনেকগুলো ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা মূলত বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যেসব আইনজীবি সংস্থা ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে হবে।
এমনকি, প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হোয়াইট হাউসেও বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে।
এই নির্দেশের ফলে, ট্রাম্প এখন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আইনজীবিদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা বা ফেডারেল সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করার মতো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে আইনজীবিরা দ্বিধা বোধ করতে পারেন।
কারণ, এমনটা হলে তারা প্রেসিডেন্টের নিশানায় পরিণত হতে পারেন এবং তাঁদের আইনী পেশা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এর আগে, ট্রাম্প পল ওয়েইস (Paul Weiss) নামক একটি আইনজীবি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এই সংস্থার আইনজীবী মার্ক পমেরান্তজ (Mark Pomerantz) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার চেষ্টা করেছিলেন।
এছাড়া, হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত একজন আইনজীবীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে পারকিন্স কোয়ি (Perkins Coie) এবং সাবেক বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের প্রতিনিধিত্ব করার কারণে কোভিংটন অ্যান্ড বার্লিং (Covington and Burling)-এর মতো সংস্থাগুলোও ট্রাম্পের রোষানলে পড়েছে।
যদিও পল ওয়েইসের প্রধান ব্র্যাড কার্প (Brad Karp) ট্রাম্পের সমালোচনার জবাবে কিছু ছাড় দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হয়।
ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো, বিভিন্ন আদালত কর্তৃক তাঁর নীতিমালার বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দেওয়া। বিশেষ করে, ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্যদের দ্রুত বিতাড়িত করার জন্য তিনি যে পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন, সেই সংক্রান্ত একটি মামলায় ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফেডারেল আদালত তাঁর এই কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
এই মামলার শুনানিতে বিচারক জেমস বোয়াজবার্গ (James Boasberg) প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, বিতাড়নের জন্য প্রস্তুত করা উড়োজাহাজগুলো ফিরিয়ে আনতে এবং অভিযুক্তদের বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে। কিন্তু প্রশাসন আদালতের লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষা করছিল বলে এই নির্দেশ মানতে গড়িমসি করে, যা বিচারকের দৃষ্টিতে আদালত অবমাননার শামিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সরকারের জবাবদিহিতার প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান