ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতি মনোভাব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার সম্পর্ক বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিচারে তার বক্তব্যে আসে পরিবর্তন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে পুতিনের প্রতি নরম মনোভাব দেখা গেলেও, পরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচনা করেন। এমনকি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দ্বিধা প্রকাশ করেন।
তবে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর তার অবস্থান কিছুটা নরম হয় এবং ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ারও ইঙ্গিত দেন।
জানুয়ারির ৩১ তারিখে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।
ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখে তিনি জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “নির্বাচন ছাড়া একজন স্বৈরাচার, জেলেনস্কির দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, না হলে তার দেশ থাকবে না।
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্পের তীব্র ভর্ৎসনার শিকার হন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মার্চের ৩০ তারিখে ট্রাম্প এক বক্তব্যে পুতিনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, “আমি মনে করি, তিনি তার কথা রাখবেন। আমি তাকে অনেক দিন ধরে চিনি, আমাদের মধ্যে সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।
এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে ট্রাম্প কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা করেন এবং পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান।
মে মাসের ২৫ তারিখে ট্রাম্প পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তার (পুতিন) সঙ্গে আমার সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তার কিছু হয়েছে। তিনি একেবারে পাগল হয়ে গেছেন।
জুন মাসের ২৫ তারিখে ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং তাকে ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার কথা বলেন।
জুলাই মাসের ৮ তারিখে ট্রাম্প পুতিনের সমালোচনা করে বলেন, “পুতিন আমাদের অনেক মিথ্যা কথা বলেন। তিনি সবসময় ভালো মানুষ হিসেবে কথা বলেন, কিন্তু তার কোনো মানে নেই।
জুলাই মাসের ১৩ তারিখে তিনি আরও বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি হতাশ। আমি ভেবেছিলাম তিনি তার কথা রাখবেন। তিনি সুন্দরভাবে কথা বলেন, কিন্তু রাতে বোমা ফেলেন। এটা আমাদের পছন্দ নয়।
জুলাই মাসের ১৪ তারিখে ট্রাম্প পুতিনকে ‘কঠিন লোক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তবে রাশিয়াকে বাণিজ্যিকভাবে একঘরে করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগস্ট মাসের ১১ তারিখে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আমি জেলেনস্কির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখি, কিন্তু আমি তার অনেক কাজের সঙ্গে একমত নই। এই যুদ্ধ হওয়া উচিত ছিল না।
এই সময়ের মধ্যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকে, যেখানে উভয় পক্ষের হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে, যেখানে ২৩২ জন নিহত এবং ১,৩৪৩ জন আহত হয়েছে।
ট্রাম্পের এই ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য এবং অবস্থানের পরিবর্তন ইউক্রেন যুদ্ধের জটিল পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। আগামী দিনে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য কোনো শীর্ষ বৈঠকের দিকেও সকলে তাকিয়ে আছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস