ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া-ইউক্রেন নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশাসন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের অবস্থান কিছুটা স্পষ্ট করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতি একদিকে যেমন রাশিয়ার প্রতি নমনীয়তা দেখাচ্ছে, তেমনি ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করার ইঙ্গিত বহন করে।
গত সপ্তাহে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিরিল দিমিত্রিভকে ওয়াশিংটনে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর এই প্রথম কোনো রুশ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্র সফর হলো।
দিমিত্রিভ রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান এবং তিনি পুতিনের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ১৮৫টি দেশের ওপর বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করলেও, রাশিয়ার এই উপদেষ্টার ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য একটি চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। এই চুক্তির শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা এবং ইউক্রেনকে তাদের সহায়তা বাবদ সমস্ত অর্থ পরিশোধের পরই রাজস্বের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনকে তারা প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছেন। এমন শর্তাবলী ইউক্রেনের সম্পদ লুন্ঠনের শামিল এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক প্রকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করার সামিল।
তবে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের মাঝে ভিন্ন সুরও শোনা যাচ্ছে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন যে, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।
কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার আসল লক্ষ্য এখনো অটুট রয়েছে। তারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায়, দেশটির পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকে রুখতে চায় এবং কিয়েভে মস্কোপন্থী একজন নেতাকে বসাতে চায়।
সম্প্রতি রাশিয়া অতিরিক্ত ১ লক্ষ ৬০ হাজার সেনা সদস্যকে একত্রিত করেছে, যা তাদের সামরিক অভিপ্রায়কে আরও জোরালো করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারাও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপে নিযুক্ত মার্কিন সামরিক কমান্ডার জেনারেল ক্রিস্টোফার ক্যাভোলি রাশিয়াকে একটি ‘দীর্ঘমেয়াদী হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, তারা হয়তো পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারছে না, আবার কারো কারো মতে, তারা জেনে বুঝেই রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এটি পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কারণ, বিশ্ব পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন