যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই প্রস্তাবের মূল কারণ হলো, সৌদি আরব তাদের নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করতে চায় এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের তেল নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই উদ্যোগে সমর্থন জানাচ্ছে, কারণ এর ফলে তারা তাদের পারমাণবিক শিল্পের জন্য একটি লাভজনক সুযোগ তৈরি করতে পারবে।
সৌদি আরবের এই আগ্রহের পেছনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। দেশটির বিশাল মরুভূমি অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তারা প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে, যা তাদের রপ্তানির পরিমাণকে কমিয়ে দেয়।
এছাড়া, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব তাদের খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম মজুত কাজে লাগাতে চাইছে। এই ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তবে, এই সহযোগিতা নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, সৌদি আরব যদি নিজস্ব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে, তাহলে তা পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটাতে পারে। এমনটা হলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হতে পারে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
অতীতে, সৌদি আরবের কর্মকর্তারা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, তাহলে তারাও একই পথে হাঁটতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, সৌদি আরবের সঙ্গে এই ধরনের সহযোগিতা একদিকে যেমন তাদের প্রযুক্তি ও ব্যবসার প্রসার ঘটাবে, তেমনই ইরান সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। বাইডেন প্রশাসনও এই বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছে।
তারা চাইছে, সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার একটি উপযুক্ত উপায় বের করতে। এছাড়াও, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও এই পারমাণবিক সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সহযোগিতা দেয়, তবে এর ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলো লাভবান হবে। আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা রয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সহযোগিতা প্রদানে রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে সৌদি আরব পারমাণবিক প্রযুক্তি ও সহায়তার জন্য রাশিয়া বা চীনের দ্বারস্থ হতে পারে।
এমনটা হলে, পারমাণবিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
অতএব, যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং বহুমাত্রিক। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং জ্বালানি বাজারের মতো বিষয়গুলো জড়িত। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত সমাধানে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস