সৌদি আরবের সাথে ট্রাম্পের বিশাল অস্ত্র চুক্তি: বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে সৌদি আরব, আমেরিকায় প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব এবং বিভিন্ন খাতে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

এই বিশাল বিনিয়োগের মধ্যে জ্বালানি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক অবকাঠামোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে হওয়া বৃহত্তম অস্ত্র চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি সামরিক বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও পরিষেবা দিয়ে আধুনিকীকরণ করা হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চুক্তির ফলে উভয় দেশই লাভবান হবে এবং এটি দুই দেশের মধ্যে নতুন করে “সোনালী যুগের” সূচনা করবে।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরকালে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সফর।

এই সফরে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও তার গন্তব্যের তালিকায় ছিল।

তবে, এই চুক্তির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কূটনৈতিক সফরকে কাজে লাগাচ্ছেন।

উদাহরণস্বরূপ, কাতার থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে একটি ৪00 মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বিমান হস্তান্তরের প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালেও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরবে সফরকালে একটি বিশাল অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যদিও ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এই সম্পর্ককে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।

এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব আমেরিকায় জ্বালানি অবকাঠামো এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বিষয়ক ডেটা সেন্টারে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। সৌদি আরব চাইছে এআই খাতে শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী হতে।

এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

চুক্তিটিতে জ্বালানি অবকাঠামো এবং খনিজ সম্পদ খাতে বিনিয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে মার্কিন প্রশাসন সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তিগুলো (Abraham Accords) ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন আরব দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং সুদানের মতো দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হলেও, সৌদি আরব এখনো এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তবে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতি এই প্রচেষ্টা আরও কঠিন করে তুলেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গাজায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

সৌদি আরব চাইছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে একটি বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে, কিন্তু ইসরায়েল এখনই সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে রাজি নয়।

এই বৃহৎ অস্ত্র চুক্তি এবং সৌদি আরবের বিনিয়োগ, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *