মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরের দিকে এখন সকলের দৃষ্টি। ক্ষমতা ফিরে পেলে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এ যাবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরটি আগামী তিন দিনের জন্য নির্ধারিত। মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা করাই হবে এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।
খবর অনুযায়ী জানা যায়, ট্রাম্প সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসাগরীয় সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন।
সফরকালে ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য থাকবে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেওয়া। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী তিনি।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছ থেকে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেতে চাইছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিল্পখাতে ব্যয় করা হবে।
এর আগে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এছাড়াও, এই সফরে অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার সিস্টেম এবং পরিবহন বিমানসহ ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র কিনতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা।
যদিও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে বিষয়টি এখন কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনের জন্য একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউএই-তে ট্রাম্পের আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি এবং উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ।
উল্লেখ্য, ইউএই আগামী এক দশকে এই খাতগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এছাড়া, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে প্রযুক্তির ওপর যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ছিল, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তা শিথিল করতে পারেন।
অন্যদিকে, কাতারে ট্রাম্পের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে সামরিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা।
এখানে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এছাড়াও, সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে কাতারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়েও তিনি কাজ করতে পারেন।
ট্রাম্পের এই সফরকালে ইসরায়েলকে এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কারণ হিসেবে জানা যায়, বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান তীব্রতর হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সফর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে পারে।
তবে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ট্রাম্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
এই সফরের ফলস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, সেদিকেও অনেকে তাকিয়ে আছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা