মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা: ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এক কঠিন সময় পার করছে। বিভিন্ন দিক থেকে আসা চাপ তাদের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর বাড়ছে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, যা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের জন্য একটি অশনি সংকেত।
ক্ষমতায় আসার দুই মাসের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি)-এর আগ্রাসী ভূমিকা, হোয়াইট হাউজে প্রেস টিমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং সরকারি ওয়েবসাইটে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরিয়ে ফেলা।
এছাড়া, গণমাধ্যমকর্মীদের উপর ব্যক্তিগত আক্রমণও বেড়েছে, যা উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন সংবাদ মাধ্যমকে দুর্বল করতে এবং তাদের স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক বিল গ্রুয়েস্কিন বলেন, “২০১৭ সালের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেক ভিন্ন।
সংবাদ মাধ্যমকে হেয় করার চেষ্টা আগেও হয়েছে, তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যরকম।”
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকেরা বলছেন, সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। তাদের মতে, এখনকার সময়ে মানুষ তথ্য পাওয়ার জন্য নতুন মাধ্যম ব্যবহার করে এবং সাংবাদিকদের অতি-সক্রিয়তা কমানো প্রয়োজন।
জনমত জরিপেও সাংবাদিকদের প্রতি অসন্তুষ্টির বিষয়টি বারবার উঠে আসছে, যা সংবাদ শিল্পের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
প্রেসিডেন্ট ও সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে এই টানাপোড়েন নতুন নয়।
কারণ, সরকার সবসময় তাদের বার্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, আর সাংবাদিকরা চান প্রশ্ন করতে।
তবে, ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের চেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশি কথা বলেন, এমনকি তিনি সরাসরি সাক্ষাৎকারও দেন।
হোয়াইট হাউস সংবাদ সম্মেলনে নতুনদের আমন্ত্রণ জানানো শুরু করে, যেখানে পডকাস্টার এবং ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল মিডিয়া আউটলেটগুলোকে সুযোগ দেওয়া হয়।
এই পদক্ষেপের ফলে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আসলেও, অনেক সময় তা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, মেক্সিকো উপসাগরের নামকরণে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) প্রেস পুল থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সাবেক হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি অ্যা decision Ari Fleischer মনে করেন, সংবাদ পরিবেশনের ধরনে পরিবর্তন আনা দরকার।
তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে পাঠক ও দর্শক যেভাবে খবর গ্রহণ করেন, সেই অনুযায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ের ধরনে পরিবর্তন আনা উচিত।
এখন মানুষ আর ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস বা তিনটি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।
তারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর সংগ্রহ করে।”
হোয়াইট হাউজ তাদের বক্তব্য প্রচারের জন্য ‘র্যাপিড রেসপন্স ৪৭’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছে, যা সাংবাদিকদের আক্রমণ করে এবং তাদের প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ জানায়।
এই অ্যাকাউন্টের প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন জানানো এবং ‘ভুয়া মিডিয়া’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ট্রাম্প প্রশাসন সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছে।
সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকারের সম্পাদনা নিয়ে এবং আইওয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনের আগে করা একটি জরিপ নিয়ে ‘দ্য ডে ময়েইনস রেজিস্টার’-এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এফসিসি-এর নতুন চেয়ারম্যান ব্রেন্ডন কারও সংবাদ মাধ্যমের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেকে মনে করেন, সরকার সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ভীতি তৈরি করতে চাইছে।
এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়তো প্রকাশ করা হবে না।
সংবাদ মাধ্যমগুলোও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এছাড়া, আটলান্টিক পত্রিকা তাদের কর্মী সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়্যার্ড (Wired) এлон মাস্কের ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
তবে, সংবাদ শিল্পের জন্য অনেক কিছুই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ভয়েস অফ আমেরিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যা চাকরি হ্রাস এবং দেশের আন্তর্জাতিক প্রভাব কমানোর কারণ হতে পারে।
এছাড়া, খবর সরবরাহকারী সরকারি সংস্থাগুলোর গ্রাহক হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা আয়ের একটি উৎস কমিয়ে দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।