ট্রাম্পের দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে মিথ্যাচার: শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার অভিযোগের সত্যতা?

শিরোনাম: শ্বেতাঙ্গ কৃষক নিধন নিয়ে ট্রাম্পের দাবি: তথ্য-প্রমাণ কতটা সঠিক?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ করেছেন। হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি তাঁর দাবির স্বপক্ষে কিছু ভিডিও, বক্তব্য এবং সংবাদ প্রতিবেদনের উদাহরণও পেশ করেন। তবে ট্রাম্পের এই দাবি কতটা সত্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায়, ট্রাম্পের এই দাবি ভিত্তিহীন।

বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে এবং তাঁরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বিষয়টিকে ‘খুব দুঃখজনক’ বলেও উল্লেখ করেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্লেষকও ট্রাম্পের এই অভিযোগকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর গণহত্যার কোনো প্রমাণ নেই।

পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার জাতিগতভাবে অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না, তবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে ১৯,৬৯৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে খামারে। নিহতদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ কৃষকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। এমনকি শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন জমির পরিমাণ দেশটির মোট জমির ৭০ শতাংশের বেশি।

ট্রাম্প তাঁর দাবির প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবিও দেখান। এর মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যায়, রাস্তার পাশে শ্বেত বর্ণের ক্রুশ চিহ্ন সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। রামাপোসা জানতে চান, ছবিগুলি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে। জবাবে ট্রাম্প জানান, ছবিগুলি দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে পরে জানা যায়, ওই ছবিগুলি সমাধিস্থলের নয়, বরং একটি প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার আইন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই আইনে সরকার কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই শ্বেতাঙ্গসহ যে কারো কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। ট্রাম্প এই আইনকে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যদিও আইনে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের দেওয়া তথ্যগুলো বিভ্রান্তিকর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। এই ধরনের মন্তব্য জটিল বিষয়গুলোকে সরলীকৃত করে এবং বিভেদ তৈরি করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে শ্বেতাঙ্গ কৃষক নিধনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *