ট্রাম্পের শুল্ক কি অর্থনৈতিক জনতাবাদকে হত্যা করেছে?

বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। অনেকের মতে, এই নীতির কারণে বিশ্বায়ন নামক ধারণাটির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কি অর্থনৈতিক জনতুষ্টিবাদের মৃত্যু ডেকে এনেছে, নাকি এটি বিশ্বায়নের পথে একটি নতুন বাঁক?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন শুল্ক বৃদ্ধি করেন, তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনকে চাপে ফেলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। তবে এর ফলস্বরূপ বাজারের অস্থিরতা বাড়ে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো ছিল না।

এই নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য চুক্তিগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর মূল কারণ ছিল বাণিজ্য ঘাটতি এবং বিশ্বায়নের প্রতি ট্রাম্পের অনীহা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে অনেক দেশই তাদের বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলো এই পরিবর্তনের ফলে কিভাবে তাদের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

বিশ্বায়নের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক বিশ্বাস, সুনির্দিষ্ট নিয়ম এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। ট্রাম্পের নীতির কারণে এই ভিত্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল, ট্রাম্পের নীতির কারণে সেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক দেশই তাদের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ফ্রেন্ড-শোরিং’ ধারণা, যেখানে দেশগুলো তাদের বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের বেছে নিচ্ছে।

কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ঘটনাগুলো বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, যার ফলে দেশগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে, বিশ্ব বাণিজ্য এখনো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বলছে, বিশ্ব বাণিজ্যে কিছুটা মন্দা দেখা দিলেও, ডিজিটাল বাণিজ্য এবং অন্যান্য সেবার কারণে এটি এখনো টিকে আছে।

এখন দেখার বিষয়, পুরনো বিশ্বায়নের ধ্বংসাবশেষ থেকে কিভাবে একটি নতুন জোট তৈরি করা যায়, যারা মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে কাজ করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে অর্থনৈতিক জনতুষ্টিবাদের উত্থান হচ্ছে, যা মুক্ত বাণিজ্যের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *