ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি: শুল্কের পাল্টা জবাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের সৃষ্টি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, চীনের পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ, ইইউ’র পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, জাপানের পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সাধারণত মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের দিকে ঝুঁকে, কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। বন্ডের দাম কমে যাওয়ায় ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি নোটের সুদহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯ শতাংশ, যা ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাজারের প্রতিক্রিয়ার একটি ইঙ্গিত।
শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। যদিও শুরুতে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল, পরে আবার দরপতন হয়। এরপর ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ লেখেন, “এই মুহূর্তে বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ! সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হবে।”
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। জেপি মর্গান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং চেয়ারম্যান, জেমি ডিমন, সম্ভাব্য মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, শুল্ক সমস্যাগুলো সমাধান করা জরুরি। ডেল্টা এয়ার লাইন্সের সিইও এড বাস্টিয়ানও বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আগের চেয়ে কম কৌশলপূর্ণ ছিল। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, একই সময়ে সবকিছু করার চেষ্টা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।
অর্থনৈতিক পূর্বাভাসদাতারা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি দেশের অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ভোক্তা চাহিদা, কর্পোরেট আস্থা, বাণিজ্য, আর্থিক বাজার এবং কর্মসংস্থান—সব ক্ষেত্রেই একযোগে ধাক্কা লাগলে চলতি বছরেই অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট অবশ্য বলেছেন, শুল্কের হার নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তিনি আরও জানান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলো আলোচনার টেবিলে বসতে চাইছে।
এদিকে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। কানাডা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের শুল্কহার নির্ধারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর নতুন কর আরোপ করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ট্রাম্প তামা, কাঠ এবং কম্পিউটার চিপসের মতো পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন। এমনকি তিনি খুব শীঘ্রই আমদানি করা ওষুধের ওপরও শুল্ক আরোপ করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস