ট্রাম্পের শুল্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে কি চমক? জন রবার্টস ও পুরোনো এক মামলার যোগসূত্র!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত শুল্ক নিয়ে বর্তমানে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছে, তাতে ১৯৮১ সালের একটি পুরনো মামলার নজির নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসও।

১৯৮১ সালে, ইরানের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন চরম খারাপের দিকে, সেই সময়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ইরানের কিছু সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তেহরানে বন্দী মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কার্টার এই কাজের জন্য আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act – IEEPA) ব্যবহার করেন।

এই আইনের অধীনে, প্রেসিডেন্ট কোনো ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ট্রাম্পও তার বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার মতো দেশগুলোর থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে এই IEEPA আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যখন বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হয়, তখন ১৯৮১ সালের ‘ডেমস অ্যান্ড মুর বনাম রিগান’ (Dames & Moore v. Regan) মামলার প্রসঙ্গটি সামনে আসে।

এই মামলায় তৎকালীন বিচারপতি উইলিয়াম রেনকুইস্টের সঙ্গে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেছিলেন জন রবার্টস। রেনকুইস্ট এই মামলার রায় লিখতে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। একদিকে যেমন তিনি অসুস্থ ছিলেন, তেমনই মামলার চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে আসছিল।

রবার্টসও তখন বার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ডেমস অ্যান্ড মুর মামলাটি মূলত ইরানের জব্দ করা সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে ছিল। কার্টার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে একটি মার্কিন প্রকৌশল সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং তারা এর প্রতিকার চেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য কার্টারের পক্ষে রায় দেয়, যা IEEPA আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে সমর্থন করে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরোধীরা বলছেন, ডেমস অ্যান্ড মুর মামলার নজির এখানে প্রযোজ্য নয়। কারণ, তাদের মতে, ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপ কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য নয়।

তারা মনে করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করা হলেও, এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ডেমস অ্যান্ড মুর মামলার রায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে সমর্থন করে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে শুল্ক আরোপের বৈধতা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান শুনানিতে ১৯৮১ সালের এই মামলার রায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এই মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসও। এমনকি, ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরাও তাদের যুক্তিতে এই মামলার নজির তুলে ধরছেন।

এই মামলার রায় শুধু শুল্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

এই রায়ের দিকে এখন সারা বিশ্বের বাণিজ্য বিশ্লেষকদের দৃষ্টি রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *