যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই নীতির ফলে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, যার আঁচ লাগতে পারে বাংলাদেশেও।
শনিবার থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্ক নীতি অনুযায়ী, আমদানি করা পণ্যের উপর এই অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা জানিয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organization – WTO) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত ‘বিরল মৃত্তিকা ধাতু’ (rare earth elements) রপ্তানি বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছে চীন।
এই ঘটনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কারণ, একদিকে যেমন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই পণ্যের দাম বাড়লে তা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে, কারণ তাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে এরই মধ্যে বিশ্ব শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শেয়ার বাজার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া, তেলের দাম কমে যাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ নিরাপদ খাতে সরিয়ে নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে কমিয়ে দিতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ করে, তৈরি পোশাক, চামড়া, এবং পাটজাত পণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।
তবে, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। বিভিন্ন দেশ এই শুল্ক নীতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেয়, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম-বেশি হতে পারে।
ভবিষ্যতে এই শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও অনেক পরিবর্তন আসবে, যা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা