ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক: বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যও এই শুল্কের আওতায় পড়তে পারে।
এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুন করে অস্থির করে তুলতে পারে এবং এর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন এই বাণিজ্য নীতির কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশ “ঠকাচ্ছে”।
তিনি বিশেষ করে ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রেক্ষাপটে তিনি ২ এপ্রিলকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন এবং এই দিন থেকে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন।
ট্রাম্পের উপদেষ্টারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা প্রায় সব পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তবে, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা মনে করছেন, এটি কেবল শুরু হতে পারে এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়তে পারে।
যুক্তরাজ্যের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদিও গত মাসে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা কেইর স্টারমারের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি আলোচনা হয়েছে, তবে শুল্কের হাত থেকে তারা রক্ষা পাবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেইনল্ডস বলেছেন, তারা চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে, যাতে তাদের শুল্কমুক্তির সুযোগ থাকে।
যদি সত্যিই এই শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? ইইউ জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য, বিশেষ করে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, টেক্সটাইল, চামড়ার পণ্য, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম, প্লাস্টিক এবং কাঠের মতো পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে।
এমনকি, তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয়ের উপরও শুল্ক বসানোর কথা বিবেচনা করছে, যা খুবই গুরুতর পদক্ষেপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশটির শিল্পখাতকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ট্রাম্প মনে করেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো দেশে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাংলাদেশ সরাসরি এই শুল্কের আওতায় পড়বে না, তবে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।
যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে, বাংলাদেশের আমদানি খরচ বাড়তে পারে।
আবার, যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউ-এর কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশ যদি কোনো পণ্য আমদানি করে, তবে সেই পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগও তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-এর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজার তৈরির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে কিছু পণ্যের আমদানি কমিয়ে দেয়, তবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করার সুযোগ পেতে পারে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। তারা ২০২৩ সালে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে চীনের সঙ্গে। এরপরই রয়েছে ইইউ। ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন ইউরো।
সুতরাং, ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মিশ্র প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন সুযোগ তৈরি করতে এবং সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবিলায় একটি উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান