নিয়ন্ত্রণ! ওষুধের দামে বিশাল পরিবর্তনের ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশন ওষুধের দাম কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে ওষুধের দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।

সোমবার এক ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো যারা ‘অতিরিক্ত মুনাফা’ করছে, তাদের ওষুধের দাম কমাতে হবে। তবে উচ্চ দামের জন্য তিনি মূলত বিদেশি দেশগুলোকে দায়ী করেছেন।

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, “আমরা দাম সমান করব। আমরা সবাই একই দাম দেব। আমরা ইউরোপ যে দামে ওষুধ কেনে, সেই দাম দেব।

দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দামে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য ধনী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি অর্থ খরচ করে। প্রায় একই ধরনের ওষুধের জন্য তারা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে থাকে।

এই পরিস্থিতির জন্য অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ শিল্পের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে দায়ী করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের উচ্চ মূল্য একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা, যা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প ২০১৭ সালে ওষুধ শিল্পকে “খুন করার” মতো পরিস্থিতি তৈরি করার অভিযোগ করেছিলেন।

তবে সোমবারের বক্তব্যে ট্রাম্প এমন ইঙ্গিতও দেন যে, দামের এই পার্থক্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণরূপে দায়ী নয়। বরং, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশে ওষুধের কম দামের ক্ষেত্রে “অনুদান” দিচ্ছে।

ওষুধ শিল্পের প্রভাবশালী লবিস্টরাও একই সুরে কথা বলছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য উচ্চ মূল্যের কারণ হলো “বিদেশি দেশগুলো তাদের ন্যায্য হিস্যা পরিশোধ করে না”।

তবে বামপন্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর পরিবর্তে বিদেশি দেশগুলোকে দোষারোপ করা হচ্ছে।

স্যান্ডার্স বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে, প্রেসক্রিপশন ওষুধের জন্য আমেরিকানদের বিশ্বের সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এটা পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, সমস্যা হলো ইউরোপ এবং কানাডায় প্রেসক্রিপশন ওষুধের দাম কম, তা নয়।

বরং, সমস্যা হলো অতিরিক্ত মুনাফালোভী ওষুধ শিল্প গত বছর আমেরিকানদের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাভ করেছে।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি তথ্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রশাসন “ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে দামের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা করবে, যাতে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রেতা এবং প্রেসক্রিপশন ওষুধের অর্থ সরবরাহকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সেরা সুবিধা পায়”।

তবে ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই আশাবাদ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, ওষুধের দাম দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ র‍্যাচেল স্যাক্স বলেন, “আসলে, পরিকল্পনাটি হলো প্রস্তুতকারকদের তাদের দাম কিছু নির্দিষ্ট পর্যায়ে স্বেচ্ছায় কমাতে বলা।

যদি তারা তাদের দাম কমাতে রাজি না হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ দীর্ঘ সময় ধরে অন্যান্য পদক্ষেপ নেবে, যার কিছু হয়তো ভবিষ্যতে ওষুধের দাম কমাতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *