মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রায়ই নীতিগত পরিবর্তন আসে, কিন্তু এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তিনি সরকারের কাঠামোয় এমন কিছু পরিবর্তন আনতে চাইছেন যা পরবর্তী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের জন্য উল্টে দেওয়া কঠিন হবে।
ট্রাম্প শুধু খরচ কমানো বা নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতেই আগ্রহী নন, বরং ফেডারেল সরকারের ক্ষমতাকেই দুর্বল করতে চাইছেন। এই লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক আকারে কর্মী ছাঁটাই, সরকারি ভবন বিক্রি, বিভিন্ন সংস্থা বিলুপ্ত করা এবং গবেষণা ও মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোর অনুদান বাতিল করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে তাঁর উত্তরসূরিদের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। এমনকি, ওয়াশিংটনের সক্রিয় ভূমিকা পুনরুদ্ধারে আগ্রহী একজন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকেও কর্মী নিয়োগ, গবেষণা কেন্দ্র পুনরায় চালু করা এবং বিদেশি সাহায্য সংস্থা খুঁজে বের করতে দীর্ঘ সময় struggle করতে হবে।
কনজারভেটিভদের (conservative) অনেকে মনে করেন, ‘প্রশাসনিক ব্যবস্থা’র (administrative state) বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই আক্রমণ ফেডারেল সরকারকে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য দুর্বল করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে ‘ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (USAID)-এর কার্যক্রম গুটিয়ে আনে। এর ফলে, সংস্থাটির অধিকাংশ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে, ৮০ শতাংশের বেশি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে এবং সংস্থাটিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের (State Department) অধীনে আনা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্বন নিঃসরণ কমাতে ওবামার (Obama) তৈরি করা নিয়মগুলি দুর্বল করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সবচেয়ে কঠিন পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেডারেল কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ফেডারেল সহায়তা কমানো।
এই ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে ভবিষ্যতে সরকারের পক্ষে দক্ষ কর্মী খুঁজে বের করা কঠিন হবে। কারণ, সরকারের অনেক কাজ প্রকৃতিগতভাবে বৃহৎ ও জটিল। ফলে, প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের খুঁজে বের করা সময়সাপেক্ষ হবে।
এর ফলস্বরূপ, সরকারি পরিষেবা প্রদানের জন্য বেসরকারি ঠিকাদারদের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডারেল সরকারের এই পরিবর্তন দেশের মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষমতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলোর কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা কমে যেতে পারে। অনুদান বাতিল হওয়ার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ল্যাব (lab) তৈরি করা বা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা বন্ধ করে দিতে পারে।
এমনকী, গবেষণা খাতে অর্থায়ন পুনরায় শুরু হলেও, অবকাঠামো এবং মেধাবী জনশক্তি তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ডাক বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে এটিকে বাণিজ্য বিভাগের অধীনে আনার চেষ্টা করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের (California state) নিজস্ব পরিচ্ছন্ন বাতাসের মান নির্ধারণের ক্ষমতা বাতিল করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও তাঁর মিত্ররা ফেডারেল সরকারের ক্ষমতাকে দুর্বল করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা মনে করেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মীরা তাঁদের ‘উদারতাবাদী স্বপ্নের’ পথে বাধা।
তাই, তাঁরা এই সংস্থাগুলোকে দুর্বল করতে চান।
তবে, কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হতে পারে, যা তাঁর পরিকল্পনাকে বাধা দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)