হোয়াইট হাউসে মুখোমুখি ট্রাম্প-সিরাইল: সম্পর্ক রক্ষার মিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাথে ট্রাম্পের বৈঠক: সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে পুনরায় স্বাভাবিক করা। এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

কারণ, ট্রাম্প সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে।

হোয়াইট হাউসে বুধবার অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে, ট্রাম্প সম্ভবত রামাফোসার কাছে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ এবং ভূমি সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে কথা বলবেন। ট্রাম্পের এই অভিযোগের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।

১৯৯৪ সালে বর্ণবাদের অবসানের পর, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেকার সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া, শ্বেতাঙ্গ বিরোধী নীতি গ্রহণ এবং মার্কিন বিরোধী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করারও অভিযোগ করেছেন।

বৈঠকের আগে, হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প সম্ভবত রামাফোসার কাছে এমন রাজনীতিবিদদের নিন্দা করার আহ্বান জানাবেন, যারা ‘গণহত্যার উসকানি’ দেয় এবং খামারে হামলার ঘটনাগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলবেন।

এছাড়াও, বাণিজ্য ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগত বাধার বিষয়টিও তিনি উত্থাপন করতে পারেন।

ট্রাম্পের এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে, অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো রামাফোসারও ‘হুমকি’ শুনতে হতে পারে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে ট্রাম্পের ভুল ধারণাগুলো দূর করা সম্ভব হবে এবং দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা যাবে।

রামাফোসা জানিয়েছেন, তিনি আলোচনাকে ফলপ্রসূ করতে আগ্রহী এবং কোনো প্রকার বিতর্ক বা অপমান এড়িয়ে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান।

এই প্রেক্ষাপটে, দক্ষিণ আফ্রিকার অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই অভিযোগের পেছনে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরও একটি ভূমিকা রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো মূলত দেশটির সাধারণ অপরাধ পরিস্থিতির অংশ, যা কোনো জাতিগত বিদ্বেষ থেকে সংঘটিত হচ্ছে না।

বৈঠকে সম্ভবত আলোচনা হতে পারে এমন একটি বিষয় হলো— দক্ষিণ আফ্রিকার ‘স্টারলিঙ্ক’ (Starlink) পরিষেবা চালু করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে বিতর্ক।

এই বিষয়ে সম্প্রতি দেশটির সরকার ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গেছে। মাস্কের অভিযোগ, শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তাঁর কোম্পানি স্টারলিঙ্ক দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করার অনুমতি পাচ্ছে না।

এই বিতর্কের কারণ হিসেবে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকান সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশ শেয়ার কৃষ্ণাঙ্গ অথবা বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়া অন্য কোনো গোষ্ঠীর লোকদের মালিকানায় রাখতে হয়।

বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *