আতঙ্কে শ্বেতাঙ্গরা! ট্রাম্পের শরণার্থী সিদ্ধান্তে কি মিলবে পরিত্রাণ?

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বিতর্কের জন্ম, শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জনমত।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ এবং তাদের জমি দখলের বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবুও অনেকে মনে করেন, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ জরুরি।

গত সপ্তাহে, প্রায় ৫৯ জন শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানকে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, হোয়াইট হাউস অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলিত হয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্প সরকার এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেওয়া সহায়তা বন্ধ করে দেয়, যা শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশটির আচরণের সমালোচনাকে কেন্দ্র করে হয়েছিল।

তবে, উদ্বাস্তু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাওয়া সবার একই উদ্দেশ্য নয়। অনেকে সহিংসতা থেকে বাঁচতে এবং উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছাড়তে চাইছেন। আবার, অনেকে চান দক্ষিণ আফ্রিকাতেই থেকে সেখানকার অপরাধ দমন করতে এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হলো ‘ওরানিয়া’ নামক একটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের বাসিন্দা, যারা নিজেদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে।

ওরানিয়ার নেতা জোস্ট স্ট্রাইডোম জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো শরণার্থী সহায়তা চান না, বরং চান তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকারকে ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকৃতি দিক। প্রায় ৩ হাজার আফ্রিকানারের বসবাস এই ওরানিয়া অঞ্চলে। এখানকার বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে এবং স্থানীয় কর নিজেরাই সংগ্রহ করে। তারা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান এবং এটিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে আগ্রহী।

অন্যদিকে, এমন অনেক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান আছেন যারা দেশ ছাড়তে চান না। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অ্যাড্রিয়ান ভস। তিনি বলেন, “আমি এখানে জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকা আমার কাছে সবকিছু।” তিনি চান, প্রেসিডেন্ট রামাপোসা যেন কৃষকদের নিরাপত্তা এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার অবশ্য শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও, এটিকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। তবে, মানবাধিকার সংস্থা ‘আফ্রিফোরাম’ জানিয়েছে, কৃষকদের ওপর হামলার সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক বৈষম্য এবং ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধগুলো এখনো একটি বড় সমস্যা। এর সমাধানে সরকার ভূমি সংস্কারের চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের থেকে জমি নিয়ে তা দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্নমত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একইসঙ্গে, দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *