মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা। এই সিদ্ধান্তটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটা বিস্তৃত, সেই বিষয়ে নতুন সংজ্ঞা দেবে।
খবর অনুযায়ী, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শীর্ষ আদালত তাদের চলতি সেশনের চূড়ান্ত রায়গুলো প্রকাশ করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত জুনের শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলো ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা এখন বিশেষভাবে নজর রাখছেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের ক্ষমতা সম্পর্কে আদালত কী বলে, সেটির দিকে।
কারণ, এই ক্ষমতা ব্যবহার করে কোনো বিচারক চাইলেই প্রেসিডেন্টের নীতিগুলো সারা দেশে আটকে দিতে পারেন।
বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ট্রাম্প প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, এই রায় তাঁদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
মূলত, আদালত এখন বিবেচনা করছে, কোনো একজন বিচারকের দেশব্যাপী কোনো নীতি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত কিনা।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, ট্রাম্প সরকারের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টার বিরুদ্ধে আনা কিছু মামলা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো শিশুর নাগরিকত্বের অধিকার রয়েছে, তাদের বাবা-মায়ের অভিবাসন বিষয়ক স্ট্যাটাস যা-ই হোক না কেন।
ট্রাম্প এই নীতির অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের এমন রায়ের ফলে ট্রাম্পের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নীতি, যেমন—কর্মসংস্থান, বাজেট এবং অভিবাসন বিষয়ক সিদ্ধান্তেও প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ২০০টির বেশি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যা অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু এর মধ্যে ডজনেরও বেশি নির্বাহী আদেশকে বিভিন্ন আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে গণছাঁটাই, দেশ থেকে বিতাড়ন এবং বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ছিল।
আদালতে শুনানিতে বিচারকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁরা সম্ভবত ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নীতি কার্যকর করার পথে থাকা বাধাগুলো সরিয়ে দেবেন। তবে একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মানুষের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার ফল নিয়ে তাঁরা এখনো দ্বিধাগ্রস্ত।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কারণ, বর্তমানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন অনেক মামলা চলছে, যেখানে তাঁর নীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, কোনো নীতিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে, সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যদি তা কার্যকর হতে থাকে, তাহলে তা গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, যদি কোনো নীতি আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং তা কার্যকর হতে থাকে, তাহলে সম্ভবত সেই নীতিটি কয়েক বছর ধরে বহাল থাকতে পারে, যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি বিবেচনা করে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তাঁর প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি জরুরি আবেদন জানিয়েছে। আদালতও ইতোমধ্যে তাঁর কিছু সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—ট্রান্সজেন্ডার সেনা সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা এবং দ্রুত বিতাড়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া।
এছাড়াও, গণছাঁটাই সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার দিকেও সবাই তাকিয়ে আছে। ট্রাম্পের প্রশাসন চাইছে, সরকারি বিভিন্ন বিভাগের আকার কমানো হোক।
এই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় সরকার মামলা করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।
তবে সুপ্রিম কোর্ট এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন