ট্রাম্পের পছন্দের সার্জন জেনারেল: বিতর্কিত থেরাপি ও মাশরুমের রহস্য!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন সার্জন জেনারেল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ডা. কেইসি মিন্স। তার মনোনয়ন ঘিরে বর্তমানে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ তিনি এখনো পরীক্ষিত নয় এমন কিছু মাদক ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে এবং তার একটি নিউজলেটারে তিনি সাইকেডেলিক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি, প্রেম খুঁজে পেতেও নাকি মাশরুমের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে সার্জন জেনারেলের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদের দায়িত্ব হলো জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করা। অতীতে এই পদে আসীন ব্যক্তিরা এই দায়িত্ব পালন করে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮০’র দশকে সার্জন জেনারেল সি. এভারেট কুপ এইডস এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধের মতো বিষয়গুলোতে জনসচেতনতা তৈরি করেন।

ডা. মিন্সের এই মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার কারণ হলো, তিনি সাইকেডেলিক থেরাপির কথা বলেছেন, যা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল আইনে অবৈধ। এই ওষুধটিকে ‘Schedule 1 drug’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যার অর্থ হলো এই ওষুধের কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবহার নেই এবং এটি অপব্যবহারের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও ওরেগন এবং কলোরাডো রাজ্যে সাইকেডেলিক থেরাপিকে বৈধ করা হয়েছে, তবে ওরেগনের কয়েকটি শহরে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ডা. কেইসি মিন্স তার বই ‘গুড এনার্জি’-তে সাইকেডেলিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। বইটি তিনি তার ভাই ক্যালি মিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন। ক্যালি বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন এবং তিনি সাইকেডেলিক ওষুধ তৈরি ও গবেষণা করে এমন কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন বলেও জানা যায়।

বইটিতে মূলত বিপাকীয় স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ডা. মিন্স এখানে মানসিক চাপ ও আঘাত থেকে মুক্তি পেতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি হলো ‘সাইলোসাইবিন-অ্যাসিস্টেড থেরাপি’ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এক ধরনের সাইকেডেলিক মাশরুম থেকে তৈরি হয়।

ডা. মিন্স তার বইয়ে লিখেছেন, কিছু মানুষের জন্য সাইলোসাইবিন থেরাপি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারির দিকে তিনি প্রথমবার মাশরুম গ্রহণ করেন।

তার মতে, সাইলোসাইবিন ব্যবহার করে তিনি এমন একটি জগতে প্রবেশ করেছিলেন, যেখানে তার ‘আমি’ নামক ধারণাটি ছিল না এবং যেখানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত ছিলেন। অক্টোবরে প্রকাশিত এক নিউজলেটারে ডা. মিন্স জানান, ৩৫ বছর বয়সে প্রেম খুঁজে পেতেও তিনি সাইকেডেলিক ব্যবহার করেছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, পছন্দের সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি কিছু গাইডদের সঙ্গে ‘প্ল্যান্ট মেডিসিন’ নিয়ে কাজ করেছিলেন।

ডা. মিন্সের মনোনয়ন প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। এর আগে ট্রাম্প প্রথমে জ্যানেট নেশেওয়াতকে এই পদের জন্য মনোনীত করেছিলেন, কিন্তু তার যোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন ওঠায় তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। কেইসি মিন্স স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও চিকিৎসা ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

বর্তমানে তার মেডিকেল লাইসেন্সটি নিষ্ক্রিয় রয়েছে।

ডা. মিন্সের এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে অনেকেই তার মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সমালোচকদের মতে, একজন সার্জন জেনারেলের কাজ হলো জনগণের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া, কিন্তু এই ধরনেরunproven চিকিৎসা পদ্ধতির সমর্থন করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *