যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় পরিবর্তন আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তার দেশের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। এর ফলে বিশ্বজুড়ে সরকার, বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প তার এই পদক্ষেপকে ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই শুল্কের পক্ষে কথা বলে আসছেন। এমনকি হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি ৪০ বছর ধরে এই বিষয়ে কথা বলছি।”
অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য পরিকল্পনা ভুল, ত্রুটিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ কেউ একে ‘যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে আসার’ (ব্রেক্সিট) সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বায়নের যুগকে শেষ করে দিতে পারে। এই শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশটির ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলস্বরূপ, প্রতিটি মার্কিন পরিবারকে গড়ে প্রায় ৩,৮০০ ডলার বেশি খরচ করতে হতে পারে।
ট্রাম্পের এই নীতির ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
তবে, ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তারা বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে দেশের শিল্পখাত পুনরায় জেগে উঠবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
ট্রাম্পের মতে, শুল্কের মাধ্যমে বিদেশি দেশগুলোর পরিবর্তে মার্কিন নাগরিকরাই তাদের সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করতে পারবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন, যা শত শত পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছিল, সেই সময়টা ‘Great Depression’-এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সেই সময় এই পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তারা মনে করেন, এর ফলে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। যদি তিনি সফল হন, তবে এটি আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম সফল একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে, যদি তিনি ভুল হন, তবে এর ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেই আমেরিকান নাগরিকরাই, যারা জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি শুনে তাকে নির্বাচিত করেছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian