রেকর্ড! ট্রাম্পের শুল্ক গণনার গোপন রহস্য ফাঁস!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন শুল্কনীতি নিয়ে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। এই শুল্কগুলি “পারস্পরিক” হিসেবে বর্ণনা করা হলেও, কিভাবে এগুলির হিসাব করা হয়েছে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি বিতর্কিত পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, যা বাণিজ্য ঘাটতি এবং রপ্তানির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

সাধারণভাবে, পারস্পরিক শুল্ক বলতে বোঝায়, একটি দেশ অন্য দেশের পণ্যের উপর যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে, সেই একই পরিমাণ শুল্ক অন্য দেশও আরোপ করবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের হিসাব নিকাশ দেখলে মনে হয়, তারা এই ধারণার থেকে বেশ দূরে সরে এসেছেন।

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন মূলত একটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এবং সেই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির পরিমাণের ভিত্তিতে শুল্কের হার নির্ধারণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি থাকে, তাহলে সেই দেশের পণ্যের উপর বেশি শুল্ক বসানো হতে পারে।

যেমন, ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৯ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩১ লাখ কোটি টাকার বেশি)। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে প্রায় ৪৩ হাজার ৯৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

এই হিসাব অনুযায়ী, চীন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ৬৭ শতাংশ মূল্যের সমান বাণিজ্য উদ্বৃত্ত তৈরি করেছে, যা ট্রাম্প প্রশাসন ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপর আরোপিত শুল্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে, বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই হিসাবের পদ্ধতিটি ত্রুটিপূর্ণ। ‘জোন্স ট্রেডিং’-এর প্রধান বাজার কৌশলবিদ মাইক ও’রোর্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নতুন শুল্কগুলি ‘পারস্পরিক’ না হয়ে বরং বাণিজ্য উদ্বৃত্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

তার মতে, শুল্কের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো শুল্কের হিসাব ব্যবহার করা হয়নি। বরং, যে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেশি, তাদেরকেই মূলত এই নীতির লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

এই ধরনের শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ও’রোর্ক মনে করেন, এই শুল্কের হার কিভাবে গণনা করা হচ্ছে, তা জানা গেলে বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো যাদের উপর তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য নির্ভরশীল, তাদের উপর এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।

এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফার মার্জিনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

এই শুল্ক নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব নাও পড়তে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলির উপর এর প্রভাব পড়লে, তা প্রকারান্তরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তাই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই জটিল পরিস্থিতিতে, শুল্ক নীতি এবং তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *