যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এই সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যেমন শেয়ার বাজারে বড় পতন হয়েছে, তেমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে এবং কর্মসংস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
গত কয়েকদিনে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি নিয়ে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, যা অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। কেউ বলছেন, এটি দর কষাকষির কৌশল, আবার কারো মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদী একটি পদক্ষেপ।
এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, বাণিজ্য যুদ্ধের এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কিভাবে তারা বেরিয়ে আসবেন?
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দেবে। এর ফলে, ভোক্তাদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।
ইতিমধ্যে, কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে কর্মীদের চাকরি হারানোরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আসন্ন নির্বাচনে তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। যদি শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তাহলে ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ রিপাবলিকান দল নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটাররা ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিকে সমর্থন জানালেও, এর দীর্ঘমেয়াদি ফল তাদের জন্য কতটা উপকারী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই শুল্ক নীতি আমেরিকার শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবে এবং দেশের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করবে। তারা বলছেন, এর ফলে অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্যের দাম কমাতে বাধ্য হবে, যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকানদের জন্য লাভজনক হবে।
তবে, এই ধরনের পূর্বাভাস কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অতীতেও এমন অনেক নজির দেখা গেছে, যখন নেতারা ভুল নীতির কারণে জনসমর্থন হারিয়েছেন। ভিয়েতনামে যুদ্ধ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের কারণে যেমন জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল, তেমনই ইরাক ও আফগানিস্তানেও ভুল নীতির কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা যদি এই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দেন, তাহলে তাদের জন্যও একই পরিণতি অপেক্ষা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়। বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য নীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।
বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন