যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরোপিত শুল্কের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আগামী ৯ জুলাই এই শুল্ক আরোপের ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
২০২৩ সালের ২ এপ্রিল, ট্রাম্প এই দিনটিকে ‘মুক্ত দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করেন। এই শুল্কের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি ছিল গত এক শতাব্দীর মধ্যে বিদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সর্বোচ্চ শুল্ক হার। এই ঘোষণার পর, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা আসার আশঙ্কা দেখা দেয়।
শুল্ক আরোপের পর, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে, শেয়ার বাজারে দরপতন দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত করেন। এর মূল কারণ ছিল, দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার সুযোগ দেওয়া। স্থগিতাদেশের সময়, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল।
বর্তমানে, যদিও শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তবে শুল্ক বৃদ্ধি পেলে এই লাভ দ্রুতই কমে যেতে পারে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও, এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে হওয়া একটি চুক্তি এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই বেশ কিছু নতুন চুক্তি আসতে পারে। একই সঙ্গে, চুক্তি সম্পন্ন না করা দেশগুলোকে নতুন শুল্কের আওতায় আনারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
৯ জুলাই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে, ট্রাম্প প্রশাসন হয় আগের শুল্ক হার বহাল রাখার, অথবা আরও বেশি শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। এমনকী, ‘সদিচ্ছার সঙ্গে’ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর জন্য শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের হাতেই।
ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চান এবং সম্ভবত দেশগুলোকে নতুন শুল্কের বিষয়ে চিঠি পাঠাবেন। এই শুল্কের পরিমাণ হতে পারে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত, আবার কিছু ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ শতাংশও হতে পারে।
ভিয়েতনামের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে, দেশটির পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ঘোষিত শুল্ক বহাল থাকলে, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ হতো ৪৬ শতাংশ। সেই হিসেবে, ২০ শতাংশ শুল্ক কিছুটা স্বস্তি দিলেও, অনেক দেশের জন্য এই হার উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, অন্যান্য দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহিত করা।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের ইক্যুইটি বিভাগের প্রধান উলরিকে হফম্যান-বারচার্ডি এক নোটে বলেছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর ফলে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের স্থিতিশীলতা বাড়বে বলে আশা করা যায়। তবে, বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা চলতে থাকায়, বাজারে অস্থিরতা কিছুটা হলেও বজায় থাকবে।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, বিশ্ব বাণিজ্য শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি এবং আমদানি ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, এই বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন