ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গভীর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইইউ।
ইইউ-এর বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ ব্রাসেলসে এক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, “৩০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক প্রায় একই প্রভাব ফেলবে। কার্যত, এটি বাণিজ্যকে অসম্ভব করে তুলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই শুল্ক আগামী ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। সেফকোভিচ আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে বর্তমান বাণিজ্য বজায় রাখা ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে পড়বে। তিনি এই ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ রুখতে সম্ভাব্য সব কিছুই করবেন বলে জানান।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পণ্য ও সেবার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১.৬৮ ট্রিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯০ লক্ষ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যায়। এই দুই পক্ষ মিলিতভাবে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
তবে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ইইউ-এর বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তাঁর মতে, ইইউ আমেরিকার সঙ্গে ‘অন্যায্য’ আচরণ করে। তিনি ডিজিটাল সেবার উপর কর এবং অন্যান্য ‘অবাণিজ্যিক বাধা’ সহ ইইউ কর্তৃক মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্কের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে, উৎপাদন শিল্পকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুল্কের হার বৃদ্ধি করেছেন বা বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।
ইইউ কর্মকর্তারা বেশ কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এড়ানো যায় অথবা এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যায়। মে মাসে ট্রাম্প ইইউ পণ্যের উপর ‘পাল্টা’ শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার হুমকি দেওয়ার পর আলোচনা আরও জোরদার হয়।
সেফকোভিচ সোমবার আবারও জানান, ইইউ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান চায় এবং ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক প্রস্তাবের আগে একটি সমাধানে আসার খুব কাছাকাছি ছিল তারা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইইউ ‘অসাধারণ’ ধৈর্য ও সৃজনশীলতা দেখাচ্ছে।
রবিবার ইইউ ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২১ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানির উপর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। এই পদক্ষেপ নেওয়ার মূল কারণ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন বলেছেন, ইইউ একটি ন্যায্য চুক্তি চায় এবং এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, “আপনি যদি শান্তি চান, তাহলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার মনে হয়, আমরা এখন সেই অবস্থানেই আছি। তাই, এখনই আমাদের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়, তবে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
শনিবার ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির পর সোমবার ইউরোপীয় শেয়ার বাজারে দরপতন দেখা যায়। দিনের শুরুতে, অঞ্চলের প্রধান সূচক Stoxx Europe 600 -এর দর ০.২৭ শতাংশ কমে যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন