আতঙ্ক! ট্রাম্পের শুল্ক: ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যে কী ঘটছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক এখন বেশ আলোচনার বিষয়। সম্প্রতি, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউও পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে, যা দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে আমাদের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র মধ্যেকার বাণিজ্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে পণ্য আমদানি করে বেশি, রপ্তানি করে তার থেকে কম। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ট্রাম্প সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে, ইইউ থেকে আসা পণ্যের উপর প্রায় ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শুধু তাই নয়, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির মতো কিছু পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছিল।

এর জবাবে, ইইউও মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক বসায়। তারা প্রায় ২৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে। ইইউ কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপকে “অযৌক্তিক এবং ক্ষতিকর” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

২০২৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মাধ্যমে ইইউ আমেরিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্র মূলত ইইউ-তে জ্বালানি, ঔষধ, যন্ত্রপাতি এবং বিমানের মতো পণ্য রপ্তানি করে থাকে। বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইইউ-তে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইইউ থেকে ঔষধ, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, গাড়ি এবং অন্যান্য মোটরযান আমদানি করে।

একই সময়ে, ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ হাজার ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ইন্ডিয়ানা সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। ২০২৪ সালে তারা প্রায় ৪৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। এর পরেই রয়েছে নিউ জার্সি, যারা প্রায় ৪০.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

তৃতীয় স্থানে থাকা নর্থ ক্যারোলাইনা প্রায় ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

রপ্তানির দিক থেকে দেখলে, টেক্সাস অঙ্গরাজ্য ইইউ-তে সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করে। তাদের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৮১.৫ বিলিয়ন ডলার। ক্যালিফোর্নিয়া ২৮ বিলিয়ন ডলার এবং লুইসিয়ানা ২০.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইইউ-তে রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে মহাকাশ প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ। এই ক্ষেত্রে অ্যারিজোনা, আরকানসাস, কানেকটিকাট, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, হাওয়াই, কানসাস, কেনটাকি, মেইন, মেরিল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউ মেক্সিকো, ওহিও, ওকলাহোমা এবং ওয়াশিংটন এর মতো রাজ্যগুলো উল্লেখযোগ্য।

অন্যদিকে, ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ১১টি রাজ্যের প্রধান আমদানি পণ্য, যার মধ্যে রয়েছে ডেলাওয়্যার, জর্জিয়া, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, কেনটাকি, মিসৌরি, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহিও, পেনসিলভানিয়া, টেনিসি এবং উইসকনসিন। মোটর গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ আটটি রাজ্যের প্রধান আমদানি পণ্য, যেমন – আলাবামা, ক্যালিফোর্নিয়া, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, নিউ জার্সি, রোড আইল্যান্ড, সাউথ ক্যারোলিনা এবং টেক্সাস।

ইউরোপীয় অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকদের সমিতি (ACEA) এর তথ্য অনুসারে, যুক্তরাজ্যের পরেই যুক্তরাষ্ট্রের স্থান, যেখানে ইইউ-এর গাড়ি রপ্তানির ২২ শতাংশ বাজার ছিল।

এই শুল্কের কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিতে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। উদাহরণস্বরূপ, গবেষণা বলছে, “ডেট্ৰয়েট থ্রি” নামে পরিচিত তিনটি বড় গাড়ি নির্মাতা – জেনারেল মোটরস, ফোর্ড এবং স্টেলান্টিস – তাদের প্রতিটি গাড়িতে যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য প্রায় ৪,৯১১ ডলার অতিরিক্ত খরচ করবে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, উন্নত দেশগুলোর মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক পরিবর্তনের ফলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে।

তাই, এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *