বিদেশী সিনেমার উপর ট্রাম্পের হুমকি: সিনেমা জগৎে কি ধস নামবে?

শিরোনাম: ট্রাম্পের চলচ্চিত্র শুল্ক প্রস্তাব: বাংলাদেশের সিনেমা প্রেমীদের উপর কি প্রভাব ফেলবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিদেশি চলচ্চিত্রের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে সিনেমা শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্পের মতে, এই ধরনের চলচ্চিত্রগুলি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে হলিউড এবং অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র শিল্পগুলো নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি মনে করেন বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, অন্যান্য দেশগুলি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।

যদিও হোয়াইট হাউস এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেইসব চলচ্চিত্রগুলোর, যেগুলো বিভিন্ন দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, হলিউডের অনেক সিনেমা তৈরি হয় যেখানে বিভিন্ন দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা কাজ করেন।

আবার, অনেক বিদেশি সিনেমাও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে চিত্রায়িত হয়।

যদি এই শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমার বাজারে পড়তে পারে। কারণ, ভারতীয় সিনেমার একটি বড় বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

সেখানকার ভারতীয় প্রবাসীরা এই সিনেমাগুলোর দর্শক। ধারণা করা হচ্ছে, শুল্ক আরোপ করা হলে সিনেমার টিকিটের দাম বাড়তে পারে, যা দর্শককে প্রেক্ষাগৃহ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের ফলে হলিউডের সিনেমাগুলিও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ, অনেক হলিউড সিনেমা বিদেশি লোকেশনে তৈরি হয় এবং সেই সব দেশে শুটিং করার জন্য অনেক সুবিধা দেওয়া হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের স্টুডিওগুলোতে হলিউডের সিনেমার শুটিং হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সিনেমা শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে ইতিমধ্যে সিনেমা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এরপর লেখক ও অভিনেতাদের ধর্মঘটের কারণেও অনেক সিনেমার কাজ বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে তা শিল্পের জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবে।

বর্তমানে, হলিউডের সিনেমাগুলো বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম।

এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে সিনেমা শিল্পে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের সিনেমা শিল্পের অধিকার রক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তারা মনে করে, এই শুল্ক আরোপ তাদের দেশের সিনেমা শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সিনেমা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক আরোপের ফলে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র শিল্পের উপর প্রভাব পড়বে।

এর ফলে সিনেমা দেখার খরচ বাড়তে পারে এবং দর্শকদের মধ্যে সিনেমা হলের পরিবর্তে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *