ট্রাম্পের নতুন শুল্ক: জিনিসপত্রের দাম কি সত্যিই বাড়বে?

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির ফলে মার্কিন বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা, আর এর বাইরে নেই বাংলাদেশও।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্য, পোশাক, ঘড়ি, জুতা, অ্যালকোহল, আসবাবপত্র এবং খেলনার দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের তৈরি পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরও বাড়তে পারে।

একইসাথে, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশ থেকে আসা পণ্যের ওপরও শুল্ক দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করেছে চীন, মেক্সিকো, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া থেকে। কম্পিউটারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে, যা ভোক্তাদের পকেটকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

এই শুল্কের কারণে স্বল্প মেয়াদে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম ১৮.২ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ৭.৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে পোশাক আমদানি করে।

নতুন শুল্ক নীতি এই দেশগুলো থেকে আসা পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, পোশাকের দাম স্বল্প মেয়াদে ৩৭.৫ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৭.৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তবে, এই শুল্ক বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাবের বাইরেও এর কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকতে পারে। যেমন, সুইজারল্যান্ড থেকে আসা ঘড়ির ওপর ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা দেশটির ঘড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এছাড়াও, জুতা এবং বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্যের দামও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল বাজারের প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে আমদানি করা মদ ও স্পিরিট থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম এবং খেলনার জন্য চীন ও ভিয়েতনামের ওপর নির্ভরশীলতা থাকায়, এই খাতগুলোতেও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে? বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) বিশ্ববাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার। যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের দাম বাড়ে, তবে তা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

কারণ, এতে মার্কিন ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমতে পারে এবং তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়াও, চীন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান এবং ভারতের মতো দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে। এই দেশগুলোর ওপর শুল্ক বাড়ানো হলে, সেই কাঁচামালের দামও বাড়বে, যা বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং খরচ কমাতে উৎপাদন দক্ষতা বাড়াতে হবে।

একইসঙ্গে, সরকারের উচিত শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলো সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা, যাতে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এর প্রভাব শুধু মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *