মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা, যারা চীনের থেকে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া এই পদক্ষেপের ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
তবে, অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন বাড়াতে তেমন সাহায্য করবে না, বরং ব্যবসায়ে ক্ষতি ডেকে আনবে। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘কাটস ক্লথিং’-এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভেন বোরেলি, যিনি অতীতে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন, তিনিও এই নীতির পুনর্বিবেচনার কথা বলছেন।
তিনি মনে করেন, ব্যবসায়ীদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় দেওয়া উচিত, যাতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এদিকে, ‘টড শেলটন’ ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক টড শেলটন জানিয়েছেন, তাঁর কোম্পানির পোশাক তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে, শুল্ক বাড়লে তাঁদের উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের উপর চাপ ফেলবে।
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ন্যাট হারম্যানের মতে, শুধু তৈরি পোশাক নয়, সুতা, কাপড়, বোতাম ও জিপারের মতো উপকরণেও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা দেশের উৎপাদনকারীদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
তাঁর মতে, এর ফলস্বরূপ, আমেরিকান পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় পোশাক ও জুতা কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পেনসিলভানিয়ার ‘আমেরিকান টেক্সটাইল কোম্পানি’-র প্রধান ল্যান্স রুটেনবার্গ জানিয়েছেন, শুল্ক বহাল থাকলে পণ্যের দাম অনিবার্যভাবে বাড়বে। তাঁর কোম্পানির প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য চীন থেকে আসে।
নতুন শুল্কের কারণে তাঁদের পক্ষে আগের মতো পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে না। রুটেনবার্গ আশঙ্কা করছেন, যদি শুল্ক কমানো বা বাতিল না করা হয়, তাহলে তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতা কমবে এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পোশাক শিল্পকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। বরং, প্রশাসনের অন্যান্য নীতি, যেমন অভিবাসন সংক্রান্ত কড়াকড়ি, স্থানীয় পোশাক শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
পোশাক কারখানাগুলো শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ববাজারে পোশাকের দামের পরিবর্তন হতে পারে। কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উপরও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান