আতঙ্কে আবাসন বাজার! ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় কি কমছে নতুন বাড়ি?

যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারে মন্দা, বাণিজ্য নীতির প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে দেশটির আবাসন খাতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উপাত্তে তা স্পষ্ট হয়েছে। এর কারণ হিসেবে শুল্ক বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করা হচ্ছে।

এই ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিষয়টি আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে নতুন আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বা ‘হাউজিং স্টার্টস’ এক বছর আগের তুলনায় ১২ শতাংশ কমে গেছে। নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুমতি বা ‘সিঙ্গেল-ফ্যামিলি পারমিট’ মার্চ মাসের তুলনায় ৫.১ শতাংশ এবং গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় ৬.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

আবাসন খাতে এমন মন্দা তৈরি হওয়ার পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে দ্বিধা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ির দাম বেশি হওয়ায় অনেক পরিবার নতুন করে বাড়ি কিনতে দ্বিধা বোধ করছেন। এছাড়া, বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এবং বাড়ির সংকট বিদ্যমান থাকায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আবাসন খাতের এই দুর্বল অবস্থার মূল কারণ হিসেবে নির্মাণ সামগ্রীর ওপর শুল্ক বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়।

এর ফলে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ে, যা বাড়ি নির্মাণে জড়িত কোম্পানিগুলোকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যদিও পরে তা কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়।

এই শুল্কের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক নির্মাতা তাদের প্রকল্পগুলো গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ হোম বিল্ডার্স (NAHB)-এর হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাড়ি ও ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত সামগ্রীর প্রায় ৭ শতাংশ, যা ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান, আমদানি করা হয়েছে।

এপ্রিল মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ নির্মাতা জানিয়েছেন যে, তারা তাদের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ানোর খবর পেয়েছেন।

তবে, অ্যাপার্টমেন্ট ও কনডোর মতো বহুতল ভবনের নির্মাণে কিছুটা ইতিবাচক চিত্র দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে পাঁচ বা তার বেশি ইউনিটের ভবন নির্মাণের কাজ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

এছাড়াও, নতুন ভবনের অনুমতি ২ শতাংশ বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কিছু কোম্পানি আগে থেকেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম নিশ্চিত করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি সংস্থা, Sage Investment Group, যারা অব্যবহৃত হোটেলগুলোকে অ্যাপার্টমেন্টে রূপান্তর করে, তারা শুল্ক আরোপের আগেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম নির্ধারণ করে নেয়।

এর ফলে তারা অতিরিক্ত শুল্ক দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায় এবং প্রায় ৩৫ লক্ষ ডলার সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি কিভাবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে প্রভাবিত করে, তা এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *