আতঙ্কে বিশ্ব! ট্রাম্পের শুল্কের শিকার কারা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি: বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই নীতি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, যার সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা সকল প্রকার আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর মত প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উপর এই শুল্কের প্রভাব হবে সবচেয়ে বেশি। চীনের ক্ষেত্রে, বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইইউ-এর জন্য এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ শতাংশ। উল্লেখ্য, চীন এবং ইইউ-এর সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে। মেক্সিকো ও কানাডার মতো দেশগুলোকেও এই নীতির আওতায় আনা হয়েছে।

যদিও মেক্সিকো ও কানাডাকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তবে তাদের থেকে আসা পণ্যের ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।

এছাড়াও, কয়েকটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ, যেমন ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়া, এই শুল্ক নীতির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের হার হতে পারে ৪৬ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত।

এই দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে ভোগ্যপণ্য, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং বস্ত্র আমদানি করে থাকে।

এই শুল্ক আরোপের পদ্ধতিটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শুল্ককে ‘পারস্পরিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, অর্থাৎ, দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধাগুলো বিবেচনা করে শুল্কের হার নির্ধারণ করা হবে।

তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে এই হিসাবের সঙ্গে শুল্কের হারের মিল নেই। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশের বাণিজ্য ঘাটতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির হিসাব করে এই শুল্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে।

যেমন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৯৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৩২ লক্ষ কোটি টাকা)। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে প্রায় ৪৩৯.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।

এই হিসাব অনুযায়ী, চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল দেশটির রপ্তানির ৬৭ শতাংশ, যার অর্ধেক হিসেবে চীনের জন্য ৩৪ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, লেসোথো নামক একটি দেশের কথা ধরুন। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল মাত্র ২৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা)। কিন্তু দেশটির জন্য শুল্কের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ, অর্থাৎ ৫০ শতাংশ।

এর কারণ হলো, এই শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই নতুন শুল্ক নীতি অনুসারে, আগামী শনিবার থেকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক কার্যকর হবে। এরপর, ৯ এপ্রিল থেকে উচ্চ হারের শুল্কগুলি কার্যকর করা হবে।

বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের উপর এখনই দৃশ্যমান না হলেও, এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিলে, বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাকের বাজারের ক্ষেত্রে, চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আরও বাড়তে পারে।

ভবিষ্যতে, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপথ।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য বিশ্ব বাজারের পরিবর্তনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *