মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কিনা, তা নিয়েই যত বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্যগুলো মনে করে, ট্রাম্প এই ক্ষেত্রে তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা মূলত কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে এই শুল্ক আরোপ করেন।
এর ফলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন সম্পর্কিত দেওয়ানি মামলার শুনানির জন্য বিশেষভাবে গঠিত ইউএস কোর্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড-এ (U.S. Court of International Trade) অন্তত সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিউইয়র্কে মঙ্গলবার সকালে এই বিষয়ে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ছোট-বড় পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য হলো, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ফলে ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
তারা আদালতের কাছে এই শুল্ক নীতি বাতিল করার আবেদন জানিয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act – IEEPA) লঙ্ঘন করেছেন। এই আইনের আওতায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে শুল্ক আরোপের কোনো সুযোগ নেই।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি, যা কয়েক দশক ধরে চলছে, কোনো জরুরি অবস্থা তৈরি করে না।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দেখাচ্ছে যে, অতীতেও প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এক অর্থনৈতিক সংকটকালে অনুরূপভাবে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং আদালত তা অনুমোদন করেছিলেন।
এই আইনি লড়াইয়ে ডেমোক্রেট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলো এবং ব্যবসার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমানোর পক্ষে থাকা বিভিন্ন সংগঠন—যেমন, লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার—একজোট হয়েছে। প্রায় এক ডজন রাজ্য ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে।
এই মামলার শুনানির ফলে শুল্ক সংক্রান্ত ভবিষ্যতের আইনি লড়াইয়ের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, তা অনেকটাই পরিষ্কার হবে। যদি আদালত জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে এই শুল্ক নীতি বাতিল করে দেয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন আপিল করতে পারে।
সেক্ষেত্রে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
যদি মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়, তাহলে আদালত ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
যদিও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনপ্রণেতারা বাণিজ্য নীতির কিছু ক্ষমতা হোয়াইট হাউজের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন, যা ট্রাম্পকে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করেছে।
বর্তমানে, অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী ট্রাম্পের শুল্কের কারণে সমস্যায় পড়ছেন। এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কের হার ১৯৩৪ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নিউইয়র্কের একজন ব্যবসায়ী ভিক্টর শোয়ার্টজ জানিয়েছেন, এই শুল্ক তাঁর ব্যবসা কঠিন করে তুলেছে। তাঁর কোম্পানি বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়াইন ও স্পিরিট আমদানি করে।
শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের মতো রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলো এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তাই, এই মামলার রায় এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস