আতঙ্কে কাঁপছে বাজার! ট্রাম্পের ‘কঠোর’ বাণিজ্যনীতির ফলে কি হবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জেরে বিপর্যস্ত এশিয়ার শেয়ার বাজার, আশঙ্কা বিশ্বজুড়ে মন্দার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এশিয়ার শেয়ার বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। সোমবার দিনের শুরুতেই জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার বাজারেও দরপতন হয়েছে।

ট্রাম্প এই শুল্ককে ‘ওষুধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যদিও এর ফলে ইতিমধ্যে মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ কমে গেছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, বিদেশি সরকারগুলোকে এই শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ‘অনেক বেশি’ অর্থ দিতে হবে। তার এই মন্তব্যের পরেই এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে আনতে পারে।

জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক অক্টোবরের পর এই প্রথমবার ৩১,০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচকের লেনদেন কিছু সময়ের জন্য স্থগিত ছিল।

তাইওয়ানের স্টক এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা আরও পদক্ষেপ নেবে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং তাইওয়ানের কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে রাজি হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর দেশের পণ্যের উপর আরোপিত ১৭ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জে পি মরগান-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ০.৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং বেকারত্বের হার বেড়ে ৫.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেছেন, তাঁর সরকার ব্রিটিশ শিল্পগুলিকে সহায়তা করবে, বিশেষ করে যারা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই পরিস্থিতিতে, বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত কোনো সমাধান না আসে, তবে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশ, যাদের রপ্তানিমুখী শিল্প বিশ্ব বাজারের স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল, তাদের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *