ট্রাম্পের শুল্ক: বাজারের অস্থিরতা, বিশ্ব নেতারা প্রতিরোধের প্রস্তুতি!

বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ: অস্থির বাজারের আশঙ্কায় বিশ্বনেতারা, বাংলাদেশের জন্য কী সম্ভাবনা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা পালটা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বিবেচনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। গত সপ্তাহে বিশ্ব বাজারের সূচকগুলি প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতিতে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) মন্দা আসার ঝুঁকি বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষক রোমান জিরুক বলেন, “এই সপ্তাহেও অস্থিরতা চলতে পারে।” অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপর থেকে শুল্ক আরোপ হয়তো স্থগিত করা হতে পারে।

তবে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। কারণ, চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে বেশি কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার শুল্কের প্রভাব থেকে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর জন্য তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন, তা এই সপ্তাহে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মন্ত্রী ড্যারেন জোন্স বিবিসিকে বলেন, বিশ্বায়নের যুগ শেষ হয়ে গেছে। যদিও যুক্তরাজ্য এখনও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী। ট্রাম্পের শুল্কের মধ্যে যুক্তরাজ্যের উপর আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্ক সর্বনিম্ন। তবে যুক্তরাজ্যে ইস্পাত ও গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (Jaguar Land Rover) তাদের কিছু চালান স্থগিত করেছে।

বার্কলেজের (Barclays) বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাজ্য ও ইইউ-তে মন্দা দেখা দিতে পারে। তারা উভয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। ইউনিক्रेडिट ব্যাংকের (UniCredit Bank) প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এরিক এফ নিয়েলসেন বলেন, “এই অর্থনৈতিক ধ্বংসের অস্ত্রের প্রভাব এখনই অনুমান করা কঠিন। তবে এটি খুবই খারাপ হতে চলেছে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির জন্য। যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা এবং সম্ভবত বিশ্বব্যাপী মন্দা একটি সুস্পষ্ট সম্ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ইতালির একটি রাজনৈতিক দলের বৈঠকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক (Elon Musk) প্রস্তাব করেন, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে। তবে বুধবার থেকে ইউরোপের উপর ২০ শতাংশ এবং চীনের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউরোপীয় নেতারা শুল্কের নিন্দা করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron) তাঁর দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন (Ursula von der Leyen) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইইউ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে।

চীনের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জর্জ ম্যাগনাস বলেন, “ট্রাম্প বা শি জিনপিং কেউই এখনই পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ চান না।” তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প ভোটারদের দেখাতে চান যে রাজস্ব ও প্রভাব বিস্তারের জন্য শুল্ক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আমেরিকান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। অন্যদিকে, শি জিনপিং তাঁর নিজস্ব অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছেন।”

ম্যাগনাস সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প চীনের সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল করার চেষ্টা করছেন এবং বেইজিং রপ্তানি বাড়াতে চাইছে। “বিশ্বকে হয় ট্রাম্পকে শুল্কের মাধ্যমে দিতে হবে, না হয় শি জিনপিংকে পরে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান হারানোর মাধ্যমে দিতে হবে।”

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে রপ্তানি কমে গেলে, তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, আমদানি ব্যয়ও বাড়বে, যা জনগণের জীবনযাত্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

তবে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগও তৈরি হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে, অনেক কোম্পানি তাদের উৎপাদন কেন্দ্র চীন থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *