ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে ‘ইউ-টার্ন’: বিশ্ব বাজারে প্রভাব, বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে জল্পনা চলছিল। বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও, শেষ পর্যন্ত সেই পথে হাঁটছেন না তিনি।
বরং, শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে, আগামী ২ এপ্রিলকে ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি যে ব্যাপক শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন, তা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে যে পরিমাণ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছিল, তা বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। বরং, আগামী সপ্তাহে সীমিত আকারে কিছু শুল্ক ঘোষণা করা হতে পারে।
তবে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তনশীল এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই খবরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সোমবার সকালে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, কঠোর শুল্ক আরোপের যে আশঙ্কা ছিল, তা হয়তো এখনই হচ্ছে না।
এর ফলে, ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক প্রায় ০.৯ শতাংশ এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১.১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এছাড়া, নাসডাকও ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করতে চেয়েছিল। এর মধ্যে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ছিল।
এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ছিল, যার মধ্যে গাড়ি, ঔষধ, মাইক্রোচিপ, তামা, কাঠ ও অন্যান্য পণ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে, এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ২ এপ্রিল থেকে সেই পণ্য-ভিত্তিক শুল্কগুলো কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকি, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টিও অনিশ্চিত।
জানা গেছে, সীমিত আকারে কিছু দেশের উপর শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, যাদের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্যায্য’ আচরণকারী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর নাম শোনা যাচ্ছে।
যদিও এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা পণ্যের একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে ট্রাম্পের আগের কঠোর সিদ্ধান্তের তুলনায় এটি অনেক কম।
শুল্ক আরোপের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই ‘আগে ঘোষণা, পরে পিছিয়ে আসা’র প্রবণতা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে দেরি করেছেন তিনি।
এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে ঘোষণা করেও তা কার্যকর করেননি। এর ফলে, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, বাণিজ্য সহযোগী এবং ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যেমন, ফেব্রুয়ারির শুরুতে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা থাকলেও, পরে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। আবার, চীনের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হলেও, তা ছিল পূর্বের ঘোষণার চেয়ে কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা তাদের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের মতো রপ্তানিনির্ভর খাতগুলো এই ধরনের পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকে।
বর্তমানে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে, যা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। মেক্সিকো ও কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কেমন প্রভাব ফেলবে, সেদিকে এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন