যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালতের এই রায়ে ট্রাম্পের বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য জরুরি অবস্থার ক্ষমতা ব্যবহার করা। ট্রাম্প তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার মতো দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, দেশের বাণিজ্য ঘাটতি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং এর মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে, আদালতের মতে, ট্রাম্প এই কাজটি করতে গিয়ে তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন। আদালত মনে করে, বাণিজ্য ঘাটতির কারণ দেখিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মাধ্যমে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। আদালতের এই রায়ের ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
আদালতের এই রায়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের। কারণ, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে। শুধু জুলাই মাস পর্যন্ত শুল্ক থেকে ১৫৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এখন যদি এই শুল্কগুলো বাতিল করা হয়, তবে সরকারের কোষাগারে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
আদালতের রায়ের ফলে ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যদিও ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন, তবে এই রায়ের কারণে বিদেশি সরকারগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে দর কষাকষি করতে উৎসাহিত হতে পারে। এছাড়া, বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি, এই রায়ের ফলে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাতেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হতে পারে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের কারণে বিদেশি সরকারগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মানতে দ্বিধা করতে পারে।
আদালতের এই রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কী হয় এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য কিভাবে প্রভাবিত হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস