আমেরিকার নাগরিকদের জন্য ট্রাম্পের শুল্ক, নাকি ট্যাক্স কাট বড়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর নীতি এবং শুল্কনীতির ফলস্বরূপ দেশটির নাগরিকদের উপর কেমন প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে একটি নতুন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে ইয়েল বাজেট ল্যাব। এই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ট্রাম্পের কর ছাড়ের থেকে শুল্কের বোঝা অনেক বেশি ক্ষতি করেছে সাধারণ আমেরিকানদের।

বিশেষ করে, স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো এর দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের সময়ে চালু হওয়া শুল্ক নীতির কারণে, একজন আমেরিকান পরিবারকে গড়ে অতিরিক্ত ২,৩০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫৩,০০০ টাকা, ধরে নেওয়া হয়েছে ১ ডলার = ১১০ টাকা) খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, কর ছাড়ের ফলে পরিবারগুলো গড়ে মাত্র ৮০০ ডলার (প্রায় ৮৮,০০০ টাকা) সাশ্রয় করতে পেরেছে।

এই হিসাবের মূল দিক হলো, কর ছাড়ের সুবিধা মূলত উচ্চ আয়ের মানুষের দিকে বেশি গেছে, যেখানে শুল্কের বোঝা সবার উপর সমানভাবে পড়েছে। ইয়েল বাজেট ল্যাবের গবেষণা অনুযায়ী, যারা বছরে প্রায় ৫,১৮,০০০ ডলার (৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা) আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের পরিমাণ প্রায় ১৩,৬০০ ডলার (প্রায় ১৪ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা)।

কিন্তু শুল্কের কারণে তাদের অতিরিক্ত ৫,৪৫০ ডলার (প্রায় ৬ লক্ষ টাকা) খরচ করতে হচ্ছে। ফলে তাদের আয়ে নিট লাভ হয়েছে প্রায় ৮,২০০ ডলার (প্রায় ৯ লক্ষ টাকা), যা তাদের আয়ের ১.৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি, যাদের বার্ষিক আয় ১,০৫,০০০ থেকে ১,২২,০০০ ডলার (১ কোটি ১৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা)-এর মধ্যে, তারা কর ছাড় বাবদ ১,২০০ ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা) সুবিধা পেলেও শুল্কের কারণে তাদের ২,২০০ ডলার (প্রায় ২ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা) বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে কম আয়ের পরিবারগুলোর। যাদের বার্ষিক আয় প্রায় ৩৯,০০০ ডলার (প্রায় ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা), তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের কারণে আয়ে প্রায় ২,৬০০ ডলার (প্রায় ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা) পতন হয়েছে, যা তাদের আয়ের ৬.৬ শতাংশ।

এই পরিবারগুলো শুল্কের কারণে ১,৩৫০ ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা) এবং করের কারণে প্রায় ১,২০০ ডলার (১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা) ক্ষতির শিকার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক নীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে খরচ হয়।

অন্যদিকে, এই শুল্ক নীতি ফেডারেল সরকারের ঋণ কমাতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের নীতি দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর প্রভাব রয়েছে। আমদানি শুল্কের কারণে কিভাবে একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *