আতঙ্কে বাজার! ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বড় ধাক্কা, কমছে শেয়ারের দাম!

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির কারণে প্রায়ই অস্থির হয়ে উঠছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার।

সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণার পর এমনটিই ঘটেছে। ট্রাম্পের এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।

যদিও পরবর্তীতে তিনি এই শুল্ক নীতি স্থগিত করেন, কিন্তু এর পরেও বাজারের এই টালমাটাল অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (তারিখ উল্লেখ করা যেতে পারে) যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর আগে, বুধবার ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট করার পর পরিস্থিতি আবার পাল্টে যায়। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চীনের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

এর পরেই শেয়ার বাজারে দরপতন আরও বাড়ে।

আমরা মনে করি পরিস্থিতি ভালো দিকে যাচ্ছে। এখানে কিছু পরিবর্তনজনিত সমস্যা (transition cost) হতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত এটি ভালো কিছু বয়ে আনবে।

ট্রাম্প

অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ট্রাম্পের এই অর্থনৈতিক নীতিকে একটি “আত্মঘাতী ক্ষত” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য এমন নীতি ক্ষতিকর।

বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্ত এবং নীতি পরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছেন।

তারা মনে করছেন, এটি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে রিপাবলিকানরা একে ট্রাম্পের ‘চুক্তি করার কৌশল’-এর অংশ হিসেবে দেখছেন।

বৃহস্পতিবার দিনের শেষে ডাউ জোনস (Dow Jones) সূচক ২.৫ শতাংশ কমে যায়। বুধবার এই সূচক বেড়েছিল। নাসডাক কম্পোজিট (Nasdaq Composite) সূচক ৪ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়।

এছাড়া, এস অ্যান্ড পি ৫০০ (S&P 500) সূচক ৩.৪ শতাংশ কমেছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই অবস্থা অনেকটা ‘rollercoaster’-এর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দেয় এবং নতুন তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি কমে ২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সাধারণত, এমন খবরগুলো বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যায়নি।

বুধবার ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানান, তিনি তাঁর শুল্ক পরিকল্পনা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করছেন। এই সময়ে বেশিরভাগ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।

তবে চীনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে ১২৫ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ এবং ২০ শতাংশ ইতোমধ্যে আরোপিত শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে ট্রাম্প অনেক দেশকে আলোচনার টেবিলে আনতে সক্ষম হয়েছেন এবং এটি আমেরিকান শ্রমিক ও উৎপাদকদের জন্য উপকারী হবে।

তবে, কিছু শিল্পনেতা এই নীতির সমালোচনা করেছেন। অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) অ্যান্ডি জ্যাসি বলেছেন, শুল্কের প্রভাব এখনো দেখা যায়নি, তবে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতারা এই খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপাতে পারে।

এছাড়া, কেপিএমজি-র প্রধান অর্থনীতিবিদ ডায়ান সোঙ্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “চীনের ওপর শুল্কের কারণে স্থগিতাদেশের পরেও কার্যকর শুল্কের হার আসলে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুল্কের হার ৩০.৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যা আমাদের খারাপ পরিস্থিতির ধারণাকেও ছাড়িয়ে যায়।”

ডেমোক্রেট দলের নেতারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, “এই বিশৃঙ্খলা ট্রাম্পের একটি খেলা। তিনি মনে করেন, তিনি অর্থনীতির সঙ্গে ‘রেড লাইট, গ্রিন লাইট’ খেলছেন।

কিন্তু এটি আমেরিকান পরিবারের জন্য খুবই বাস্তব।”

কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্য সম্ভাব্য বাজার কারসাজির অভিযোগ তুলেছেন। সিনেটর অ্যাডাম শিফ বলেছেন, “এই ধরনের নীতি পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়।

প্রশাসনের কোন ব্যক্তি ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগে থেকে জানতেন? তারা কি শেয়ার কিনে লাভবান হয়েছেন?”

অন্যদিকে, ডেমোক্রেট হাউজের হুইপ ক্যাথরিন ক্লার্ক বলেছেন, “শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার দুই ঘণ্টা আগে, ট্রাম্প তাঁর পেইড ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ গ্রাহকদের শেয়ার বাজার কেনার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এটা দুর্নীতির নামান্তর।”

নেভাডার প্রতিনিধি স্টিভেন হর্সফোর্ড বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে জানতে চান, এই সিদ্ধান্ত বাজার কারসাজির শামিল কিনা। জবাবে প্রতিনিধি জানান, ‘না’।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *