ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর ফলস্বরূপ, তাইওয়ান এবং হংকংয়ের মুদ্রা বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা মার্কিন ডলারের ভবিষ্যৎ এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি, তাইওয়ানের মুদ্রা, নিউ তাইওয়ান ডলার, মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৮ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। সাধারণত স্থিতিশীল থাকা তাইওয়ানের বাজারে এমন পরিবর্তন খুবই অস্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনার কারণে তাইওয়ানকে কিছু ছাড় দিতে হয়েছে, যার ফলস্বরূপ এই পরিবর্তন।
তাইওয়ানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত এক সংবাদ সম্মেলন করে এই গুজবের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, বাণিজ্য-সংক্রান্ত কোনো চুক্তির কারণে মুদ্রা বিনিময় হারে পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ সৃষ্টি করেছে, এমন খবর ভিত্তিহীন।
অন্যদিকে, হংকংয়ের মুদ্রা, হংকং ডলার, মার্কিন ডলারের সঙ্গে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। কিন্তু সম্প্রতি, হংকং ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সেখানকার মুদ্রা কর্তৃপক্ষকে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ মার্কিন ডলার কিনতে হয়েছে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, একদিনে তারা প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি) খরচ করেছে। হংকংয়ের এই পদক্ষেপ সেখানকার আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার একটি প্রয়াস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাইওয়ানের এই মুদ্রা-বৃদ্ধি এবং হংকংয়ের পদক্ষেপ—উভয়ই ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট উদ্বেগের প্রতিফলন। তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কারণে তাইওয়ান বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই পরিস্থিতিতে, তাইওয়ানের মুদ্রার পরিবর্তন বিশ্ব বাজারে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ডলারের দুর্বল হয়ে যাওয়াটা ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে, অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর আরও কমতে পারে।
এমনটা হলে, মার্কিন পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে আরও সস্তা হবে। এর ফলে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। তবে, এর ফলে এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তাদের মুদ্রাগুলোর দর বাড়তে পারে।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলারের দর উঠা-নামা করলে, আমাদের আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তাই, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের বিশ্ব অর্থনীতির গতিবিধির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এবং দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন