ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সুবিধা পাবে চীন?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতির কারণে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের সুবিধা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই শুল্কগুলি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

খবর অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের ফলে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন আমদানি করা গাড়ির যন্ত্রাংশ ও গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চাইছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের ব্যবসায়িক সুবিধা হতে পারে।

যদিও এই শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গাড়ি শিল্পকে শক্তিশালী করা, কিন্তু এর ফলস্বরূপ চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকরা বিশ্ব বাজারে তাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে সুবিধা পেতে পারে।

বর্তমানে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি বিক্রি খুবই সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া গাড়ির মধ্যে চীনের তৈরি গাড়ির পরিমাণ ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ।

এর প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা গাড়ির ব্র্যান্ড পরিচিতি কম এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ক। এছাড়াও, ২০২৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা “সংযুক্ত ভেহিকেল” (Connected Vehicle) -এর যন্ত্রাংশ বা সফটওয়্যার বিক্রি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে, যা মূলত জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে করা হচ্ছে।

এই ধরনের সিস্টেমগুলো সাধারণত ইলেক্ট্রিক গাড়িতে (ইভি) দেখা যায়, যা ব্লুটুথ, ওয়াইফাই বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গাড়ির ডেটা আদান প্রদানে সহায়তা করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক নীতি ইউরোপ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে, যা চীনের কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।

কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। অন্যদিকে, চীনের ইভি (EV) প্রস্তুতকারক এবং ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

এমনকি, তারা বিশ্ব বাজারে তাদের ব্যবসায়িক পরিধিও বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের BYD কোম্পানি তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের সাফল্যের কারণে গত বছর টেসলার চেয়ে বেশি আয় করেছে।

তবে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি টেসলার উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, টেসলা বিদেশি যন্ত্রাংশের উপর কম নির্ভরশীল।

কিন্তু এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই, জাপানের নিসান এবং জার্মানির বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজের মতো কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অন্যদিকে, চীনের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরা এই শুল্কের কারণে ক্ষতির শিকার হতে পারে। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

মেক্সিকোতে চীনের অনেক প্রস্তুতকারক তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর বাণিজ্য চুক্তি (USMCA)-এর সুযোগ নিতেই তারা এমনটা করেছে।

এর ফলস্বরূপ, মেক্সিকো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের কিছু কোম্পানি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কারখানা স্থাপনের অনুমতি চাইবে। এছাড়াও, হুন্দাইয়ের মতো অন্যান্য এশীয় গাড়ি প্রস্তুতকারকও এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, চীনা গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকে থাকা কঠিন হতে পারে। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চীনা কোম্পানিগুলো হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য নতুন কোনো পথ খুঁজে বের করবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *