কফির দামে আগুন! ট্রাম্পের শুল্কের কোপ, মাথায় হাত!

কফি উৎপাদনে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে কফির দাম, যা ভোক্তাদের উদ্বেগের কারণ।

বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে শুল্ক নীতি। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কফির দাম বৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বিভিন্ন দেশ থেকে কফি আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপ করা হয়েছিল।

এর ফলে কফি উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাজিল থেকে আসা কফি, যেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, ভিয়েতনাম থেকে আসা কফির উপর ২০ শতাংশ এবং কলম্বিয়া থেকে আসা কফির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।

এই শুল্কের কারণে কফি উৎপাদনকারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা বলছেন, শুল্কের কারণে তাঁদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় আগস্ট মাসে খুচরা বাজারে কফির দাম প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। রেস্টুরেন্টগুলোতে এক কাপ কফির গড় দাম ১০ সেন্ট বেড়ে হয়েছে ৩.৫২ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৭৭ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৭ টাকা)।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক কাপ সাধারণ কফির দাম দাঁড়িয়েছে ৪.২১ ডলার (৪৫১ টাকা) এবং কোল্ড ব্রু কফির দাম ৫.৩৫ ডলার (৫৭৩ টাকা)।

কফি উৎপাদনকারীদের সংগঠন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবহৃত কফির সিংহভাগ আসে ব্রাজিল (৩০.৭%), কলম্বিয়া (১৮.৩%) এবং ভিয়েতনাম (৬.৬%) থেকে।

শুল্কের কারণে এই দেশগুলো থেকে কফি আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে, যার ফলস্বরূপ কফির দাম বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে, কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা কফির উপর থেকে শুল্ক তুলে দেওয়ার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যার নাম ‘নো কফি ট্যাক্ট’। যদিও এটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি, তবে ভোক্তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে।

ওয়াশিংটন ডিসির ‘Swing’s Coffee Roasters’ -এর মালিক মার্ক ওয়ার্মুথ জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে তাঁরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।

তাঁর মতে, “এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা।” তিনি আরও যোগ করেন, এক কাপ কফির দাম ১০ থেকে ১৫ সেন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে।

কফির দাম বাড়লেও ক্যাফিন-আসক্ত মানুষেরা হয়তো কফি খাওয়া বন্ধ করবেন না, তবে তাঁরা ব্র্যান্ড পরিবর্তন করতে বা কম দামের কফি বেছে নিতে পারেন।

ক্যালিফোর্নিয়া ও মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ‘Vigilante Coffee Company’-র মালিক ক্রিস ভিজিলান্তে জানিয়েছেন, এক পাউন্ড কফির দাম প্রায় ৪ ডলার থেকে বেড়ে ৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তাঁর মতে, শুল্কের কারণে একটি ১২ আউন্স কফির প্যাকেটের দামও প্রায় ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এই পরিস্থিতি ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তাঁদের শুরুতে বেশি বিনিয়োগ করতে হয়।

কফির দাম বাড়লে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের এই ধরনের নীতি, বিশেষ করে শুল্ক বৃদ্ধি, কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদেরই প্রভাবিত করে না, বরং এর একটি সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়তে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ যদি কফি বা সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করে, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *