যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে ফেডারেল আদালত। আদালত জানিয়েছে, জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে ট্রাম্প যে শুল্কনীতি তৈরি করেছিলেন, তা আসলে অবৈধ ছিল। তবে এখনই এই শুল্কগুলো বাতিল করা হচ্ছে না, কারণ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত এই রায় দেয়। আদালতের মতে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা তার এখতিয়ারের বাইরে ছিল। এর আগে, একটি ফেডারেল বাণিজ্য আদালতও একই রায় দিয়েছিল।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, “মনে হয় না কংগ্রেসের এমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল যে প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের অসীম ক্ষমতা দেওয়া হবে।
তবে, আদালত এখনই শুল্কগুলো বাতিল করার নির্দেশ দেয়নি। তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় দিয়েছে, যাতে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই রায় বহাল থাকলে তা কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস ডেকে আনবে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কুশ দেসাই বলেছেন, ট্রাম্প আইন মেনেই কাজ করেছেন এবং তারা এই বিষয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই রায়ের ফলে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে এটি প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, মাদক ও অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলায় কানাডা, চীন ও মেক্সিকোর ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
আদালতের এই রায়ের ফলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এই রায়ের সরাসরি কোনো প্রভাব দেখছেন না।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কংগ্রেস তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে পারে। একইসাথে, ভোক্তাদের জন্য শুল্কের বোঝা কমানোরও সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এই রায়ের ফলে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির মূল ভিত্তি নড়ে যেতে পারে, যা তিনি একাই তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুল্ক আরোপের অন্য কিছু সুযোগ তার হাতে রয়েছে, তবে সেগুলোর প্রয়োগ অনেক সীমিত। ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি এবং এর এলোমেলো প্রয়োগ বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে এবং পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আশঙ্কা, শুল্ক বাতিল করা হলে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে হতে পারে। বর্তমানে, শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ১৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
উল্লেখ্য, এই রায়টি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম বা গাড়ির মতো পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, এই রায়ে সেটিরও কোনো পরিবর্তন হবে না।
যদি এই শুল্কগুলো বাতিল হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, সেদিকে এখন সবার নজর। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং বিদেশি ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে ভবিষ্যতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস