মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট সাইক্লিং পোশাক প্রস্তুতকারক কোম্পানি, যার নাম টেরি প্রিসিশন সাইক্লিং, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরোপিত শুল্কের কারণে টিকে থাকার লড়াই করছে। কোম্পানিটি এখন সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার সঙ্গে জড়িত, যেখানে এই শুল্কের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
এই মামলার রায় শুধু তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতি এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
ভের্মন্টের বার্লিংটনে অবস্থিত এই কোম্পানির প্রধান নিক হলম জানান, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর থেকেই তারা ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। গত ৪০ বছর ধরে, বিশেষ করে নারীদের জন্য সাইক্লিং পোশাক তৈরি করে আসা এই কোম্পানিটি কঠিন বাজার পরিস্থিতি, সামান্য মুনাফা এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ব্যবসায়ে উত্থান-পতন দেখেছে।
হলম বলেন, “আমরা মনে করেছিলাম, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।”
কোম্পানির অফিসটি শহরের একটি শান্ত ও সবুজ এলাকায় অবস্থিত, যেখানে তাদের ডিজাইন ও বিক্রয়কর্মীরা কাজ করেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে সাইক্লিং শর্টস, যা ফ্রান্স, গুয়াতেমালা ও ইতালি থেকে আনা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়।
এছাড়া, তাদের আকর্ষণীয় ডিজাইনের জার্সিগুলো তৈরি হয় চীনের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
শুল্কের কারণে তাদের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে, তাদের পক্ষে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
হলম বলেন, “যদি আমরা খেলার নিয়ম না জানি, তাহলে খেলব কীভাবে?” উদাহরণস্বরূপ, চীনের শুল্ক ১৪৫ শতাংশে পৌঁছানোর পরে, একটি শর্টসের দাম $৫০ ডলার বেড়ে যায়, যা মোট দাম $১৯৯ ডলারে দাঁড়ায়।
টেরি প্রিসিশন সাইক্লিং-এর মতো আরও কিছু ছোট ব্যবসাও এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ইউটাহের একটি স্যানিটারি সামগ্রী সরবরাহকারী সংস্থা, নিউইয়র্কের একজন ওয়াইন আমদানিকারক এবং পেনসিলভানিয়ার মাছ ধরার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক।
তারা সবাই মনে করে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।
এই ব্যবসায়ীরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে আমদানি শুল্ক পরিবর্তন করতে পারেন না। তাদের মতে, এটি জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত, যা আমেরিকান বিপ্লবের সময়কার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ছিল।
তাদের হয়ে মামলা লড়ছে ‘লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার’ নামের একটি সংস্থা।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে যে, প্রেসিডেন্টকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে শুল্কও অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাম্প এই মামলাটিকে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, যদি তারা মামলায় জেতেন, তবে দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্পের সরকার আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act) ব্যবহার করে এই শুল্ক আরোপ করে, যা সাধারণত অন্য দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তবে, এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট বাণিজ্য শুল্কের জন্য এই আইনের প্রয়োগ করেননি।
বর্তমানে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদালতকে এখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটুকু, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জানা গেছে, ট্রাম্পের সময়ে নিয়োগ পাওয়া তিনজন বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারকরাও প্রেসিডেন্টের এই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে সন্দিহান।
এই মামলার রায়ের ফলে শুধু টেরি প্রিসিশন সাইক্লিং-এর ভবিষ্যৎ নয়, বিশ্ব বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
হলম মনে করেন, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকে থাকার জন্য তারা লড়ছেন, যাতে সাইক্লিংয়ের প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নারীরা এই খেলা চালিয়ে যেতে পারেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস