ইউরোপের অর্থনীতিতে বছরের শুরুতে কিছুটা উন্নতির আভাস দেখা গেলেও, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে সেই সম্ভাবনা ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্য আমদানির উপর ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর রফতানি বাণিজ্য, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP) প্রথম প্রান্তিকে ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ০.২ শতাংশ।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির কারণে এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার।
ফলে, শুল্কের কারণে দেশটির বাজারে ইউরোপীয় পণ্যের চাহিদা কমতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র যদিও ৯০ দিনের জন্য কিছু শুল্ক স্থগিত করেছে, তবে ইইউ-এর পক্ষ থেকে এই শুল্ক কমানোর বিষয়ে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত খুবই কম।
এছাড়া, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে, যা ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
এই শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর গিয়ে পড়বে, কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলস্বরূপ ইউরোপে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস সূচক মার্চ মাসে ৯৩.৬-এ নেমে এসেছে, যা ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রজেস্কি মনে করেন, শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং উত্তেজনার কারণে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে।
তিনি আরও যোগ করেন, “মার্কিন বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে, আগামী মাসগুলোতে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও স্থবিরতা বজায় থাকবে।”
তবে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের আগে ইউরোপের অর্থনীতিতে ইতিবাচক কিছু দিক দেখা গিয়েছিল।
কর্মসংস্থান ছিল ভালো, বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ, এবং মূল্যস্ফীতিও ২.২ শতাংশে নেমে আসায় ভোক্তারা খরচ করতে শুরু করেছিলেন।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ECB) সুদের হার কমিয়ে ঋণ সহজলভ্য করার চেষ্টা করছে।
জার্মানির সরকারও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল অনুমোদন করেছে।
জার্মানি ইউরোজোনের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমে গেছে।
দেশটির সরকার চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে। জার্মানির এই মন্দা পরিস্থিতি ইউরোপের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি রফতানিনির্ভর অর্থনীতি, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।
ইউরোপের অর্থনীতির এই সংকট নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন